বিনোদন ডেস্ক : ব্যক্তিজীবনে একজন মানুষ একাধিক পরিচয় বহন করে থাকেন। তার ব্যতিক্রম নন বলিউড বাদশা শাহরুখও। একাধারে তিনি অভিনেতা, প্রযোজক ও সফল ব্যবসায়ীও। তবে তাঁর সকল পরিচয় ফিকে হয়ে যায় একটি পরিচয়ের কাছে এসে, সেটি অভিনেতা।
চলচ্চিত্রই শাহরুখকে নিয়ে গেছে শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায়। তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব। তাঁর হাত ধরে এসেছে ‘বাজিগর’, ‘ডর’, ‘মহাব্বাতে’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (ডিডিএলজে)’, ‘স্বদেশ’, ‘কাল হো না হো’, ‘বাদশা’, ‘জওয়ান’র মতো অনেক হৃদয়ছোঁয়া চলচ্চিত্র।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ৯০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে রাজকুমার কাপুর পরিচালিত ‘দূরদর্শন’ নামের একটি টিভি ধারাবাহিকে ‘সৈনিক’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। আর তারকাখ্যাতির দেখা পেয়েছিলেন ‘ডিডিএলজে’র সুবাদে। সর্বশেষ শাহরুখের কাছ থেকে পেয়েছি ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ ও ‘ডাঙ্কি’র মতো চলচ্চিত্র।
এর আগে ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ অভিনীত সিনেমা ‘জিরো’। বক্স অফিসে আনন্দ এল রায় পরিচালিত এই সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তারপরই দীর্ঘ বিরতির পথে হাঁটেন শাহরুখ। অবশেষে সেই বিরতি ভেঙে গত বছর উপহার দিয়েছেন তিন-তিনটি ব্লকবাস্টার।
কিন্তু যখন শাহরুখের হাতে কোনো সিনেমা থাকে না, তখন কীভাবে সময় কাটে তাঁর? সেই রহস্যও ভক্তদের কাছে খুব একটা লুকানো নয়! অভিনয় ছাড়াও নানা কাজে ব্যস্ত শাহরুখ। চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজি আইপিএলে (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) তাঁর মালিকানাধীন দল রয়েছে। কে না জানে সেই দলের নাম—কলকাতা নাইট রাইডার্স! ২০০৮ সালে অভিনেত্রী জুহি চাওলা ও তাঁর স্বামী জে মেহতার সঙ্গে অংশীদারিত্বে এই দল কিনেছিলেন তিনি। এছাড়া ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে রয়েছে শাহরুখের দল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স।
অন্যদিকে, তারও আগে চলচ্চিত্র ব্যবসায় নাম লেখান বলিউড বাদশাহ। সেটারও শুরু হয়েছিল বান্ধবী জুহি চাওলার সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আজিজ মির্জা নামে আরও একজন। কিন্তু সেটি খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। অবশেষে স্ত্রী গৌরীকে নিয়ে শাহরুখ শুরু করেন তাঁর রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের যাত্রা। এই প্রতিষ্ঠানের পরিধি এখন আরও বেশি বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্রের সৃজনশীল বিকাশ, উৎপাদন, বিপণন, বিতরণ, লাইসেন্সিং, মার্চেন্ডাইজিং করে থাকে তাঁর কোম্পানি। রেড চিলিসের রয়েছে আরেকটি গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠান, সেটি ভিএফএক্স স্টুডিও।
এই দুই অন্যতম কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ও প্রতিষ্ঠানে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত শাহরুখ। দুবাইভিত্তিক একটি আবাসন কোম্পানির সঙ্গে তাঁর অংশীদারিত্ব রয়েছে। সমুদ্রপাড়ে তাঁরা গড়ে তুলেছেন ‘এসআরকে বুলেভার্ড’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মতে, শাহরুখ বর্তমানে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির মালিক। ব্লকবাস্টার সিনেমাপ্রতি তিনি ১৫০ থেকে ২৫০ কোটি রুপি লাভ পেয়ে থাকেন।
অবসরে শাহরুখ বই পড়তেও ভালোবাসেন। তাঁর প্রিয় বইয়ের তালিকায় রয়েছে ড্যান ব্রাউনের ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’, ওয়েন কোলফারের ‘আর্টেমিস ফাউল’, ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের ‘ডেভিড অ্যান্ড গোলিয়াথ’, রিক রিওর্ডানের ‘দ্য লাইটনিং থিফ’ উল্লেখযোগ্য।
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান শুধু তাঁর অভিনয় দক্ষতা কিংবা ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বের জন্যই নয়, বিচক্ষণ কথার জন্যও জনপ্রিয়। অভিনেতার কথায় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পান তাঁর অগণিত ভক্ত। তবে তাঁদের কাছে এই আস্থার প্রতীক তিনি হয়ে উঠেছেন কিন্তু চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই।
শাহরুখের ভাষ্য, ‘আমার ভক্তরা আমার জন্য যা করেছে তার শোধ কখনো দিতে পারব না, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে এবং সেই ভালোবাসা আমাকে নিয়ে গেছে এক নম্বর অবস্থানে, যেখানে আজ আমি আছি। আমার ভক্তদের জন্য আমি একমাত্র কাজটি করতে পারি যে, তা হলো কখনোই কাজ বন্ধ না করা। একেবারে শেষ অবধি (জীবনের) চলচ্চিত্র করা, এটিই একমাত্র উপায় যেভাবে আমি তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।