বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তালা ভেঙ্গে ফেলার ভয় থাকে, আর পাসওয়ার্ড নিয়ে ভয় থাকে হ্যাকিংয়ের। তবে, কীভাবে নিজেদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখা উচিত? একটি উত্তর হতে পারে, ‘বায়োমেট্রিকস’।
একসময় সাই-ফাই সিনেমায় দেখতে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং প্রযুক্তি এখন মানুষের পকেটে পকেটে, সুরক্ষিত ভবন থেকে এটিএম ও স্মার্টফোনের মতো বিভিন্ন ডিভাইসজুড়ে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ। এগুলো হল, ‘অপটিকাল’, ‘ক্যাপাসিটিভ’ ও ‘আল্ট্রাসনিক’। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে তারা কাজ করে।
অপটিকাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার
আঙুলের ছাপ শনাক্তের একদম প্রথম দিকের প্রযুক্তি অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। দৃশ্যমান আলো ও ছবি তোলার ডিভাইস ব্যবহার করে এ স্ক্যানারটি আঙুলের ছাপ নিখুঁতভাবে শনাক্ত করে। একটি ছবি তুলে সেই ছবিটিকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করে এ প্রযুক্তি।
আলোতে সংবেশনশীল এমন মাইক্রোচিপের ওপরে নির্ভর করে প্রক্রিয়াটি। এটি হতে পারে ‘চার্জড কাপলড ডিভাইস’ বা সিসিডি, অথবা ‘মেটাল-অক্সাইড সেমিকন্ডাকটর’ (সিএমওএস), যা আঙুলের প্যাটার্নকে শনাক্ত করে। যেহেতু আঙুলের ছাপের উঁচু নিচু অংশগুলো আলোকে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত করে, স্ক্যানারটি এ প্যাটার্নগুলোকে এক ও শূন্যের বাইনারি সংখ্যায় অনুবাদ করে প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য আলাদা ও অনন্য ‘ডিজিটাল কি’ তৈরি করে।
এর নির্ভুলতা ও সাধারণ ধরনের ফলে, বাড়িতে বা ব্যক্তিগত গ্যাজেটে ব্যবহারের অন্যতম প্রধান পছন্দ হতে পারে অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার।
তবে, এ স্ক্যানারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘স্পুফিং’। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে মিথ্যা আঙ্গুলের ছাপ তৈরি করা সম্ভব, যা অনেক সময়ে স্ক্যানারটি ধরতে পারে না। এ ছাড়া, আঙুল বা স্ক্যানারের পৃষ্ঠে ময়লা, আর্দ্রতা বা তেল জমার ফলে আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
ক্যাপাসিটিভ ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার
ক্যাপাসিটিভ ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং প্রযুক্তি বছরের পর বছর ধরে মোবাইল ফোনের একটি অন্যতম ফিচার। এ প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘আইফোন ৫এস’ বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে।
এ ক্ষেত্রে, স্ক্যানারের পৃষ্ঠটি ‘কন্ডাকটিভ ম্যাটেরিয়াল’ বা পরিবাহী উপাদান, যেমন তামা বা ‘ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড’ দিয়ে তৈরি হয়, যার নিচের দিকটা ক্যাপাসিটিভ সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
স্ক্যানারের ওপরে আঙুল চেপে ধরলে, আঙুলের ছাপের উঁচু অংশগুলো ক্যাপাসিটরকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে, কারণ সেন্সরের সঙ্গে এ অংশের সংযোগ বেশি থাকে। এ বিষয়টিই বৈদ্যুতিক চার্জ স্টোরেজে সঠিকভাবে ধারণ করে সেন্সর, যা ফিঙ্গারপ্রিন্টের নির্ভুল ছবি তুলে ধরে।
ক্যাপাসিটিভ স্ক্যানারের কমপ্যাকট বা আঁটসাঁট প্রকৃতির কারণে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপে এগুলো ভাল কাজ করে। পাশাপাশি, অপটিকাল স্ক্যানারের তুলনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার সুবিধাও রয়েছে এতে। এ ক্ষেত্রে সহজে ‘স্পুফিং’ করা যায় না। এ স্ক্যানারে আঙুলের গতিবিধি শনাক্ত করার বাড়তি সুবিধাও রয়েছে।
আল্ট্রাসনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার
এ খাতে নতুন ও ‘প্রিমিয়াম’ উদ্ভাবনের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে আল্ট্রাসনিক সেন্সর। এ প্রযুক্তিটি তুলনামূলক দামি হলেও মোবাইল ফোনে উন্নত ‘ইন-ডিসপ্লে’ ফিঙ্গারপ্রিন্টের রাস্তা তৈরি করছে এটিই। এ প্রযুক্তিটি আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতোই কাজ করে।
এ সেন্সর আঙুলে আল্ট্রাসনিক পালস পাঠায়, এগুলো এমন শব্দ তরঙ্গ যা মানুষ শুনতে পারে না। আঙুলের ছাপের অনন্য প্যাটার্ন এসব স্পন্দনের সঙ্গে সংস্পর্শে এলে ভিন্ন ভিন্ন ‘ইকো ইনটেনসিটি’ বা প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। আর সেন্সরটি এ প্রতিধ্বনিগুলোকেই ৩ডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মানচিত্রে অনুবাদ করে ফেলে।
অপটিকাল ও ক্যাপাসিটিভ সেন্সরের তৈরি ‘২ডি’ আঙুলের ছাপের বিপরীতে আল্ট্রাসনিক সেন্সর উন্নত ‘৩ডি’ আঙুলের ছাপ তৈরি করে। এ বিষয়টিই আল্ট্রাসনিক সেন্সরকে আরও নির্ভুল ও ‘স্পুফিং’ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আরও নিরাপদ করে তোলে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ।
পাশপাশি, এ সেন্সরে ময়লা, তেল বা আর্দ্রতা থাকলেও এটি সঠিকভাবে স্ক্যান করতে পারে। ফলে, অপটিকাল ও ক্যাপাসিটিভ সেন্সরের তুলনায় এগুলোর দাম কিছুটা বেশি। আর নির্ভুলতার জন্য এ আল্ট্রাসনিক সেন্সর কিছু ধীর গতিতে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করে।
ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানারে সফটওয়্যারের কাজ কী?
ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারগুলোকে সফটওয়্যার ও অতিরিক্ত ফিচার দিয়ে আলাদা করা হয়, যা এসব সেন্সরের কর্মক্ষমতা ও বিভিন্ন ফিচারকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন কোম্পানি আঙুলের ছাপ শনাক্তের অ্যালগরিদমগুলো আলাদাভাবে তৈরি করে থাকে, ফলে এসবের গতি ও নির্ভুলতাসহ বিভিন্ন ফিচার পরিবর্তন হয়।
উদাহরণ হিসেবে মূল একটি উপাদান হল ‘আইসি’, যা স্ক্যান করা তথ্য প্রক্রিয়া করে। আঙুলের ছাপের বিভিন্ন ফিচার শনাক্ত করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। এতে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা কমানোর পাশাপাশি ফিচারটিকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলে এ প্রক্রিয়া।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা
বেশি গতির ও ডিসপ্লে স্ক্রিনের নিচে বসানো যায় অপটিক্যাল স্ক্যানারগুলো, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এ স্ক্যানারকে বোকা বানান সহজ। এদিকে, সমানভাবে দ্রুত ও আরও নিরাপদ ক্যাপাসিটিভ স্ক্যানার স্ক্রিনের নিচে লুকানো যায় না। এ তুলনায়, চলার মতো গতি, ভালো নিরাপত্তা ও কাঁচের নিচে কাজ করার ক্ষমতার সমন্বয়ে আল্ট্রাসনিক স্ক্যানার কিছুটা ভারসাম্য তৈরি করে, যদি না এসব স্ক্যানারের চড়া দামের দিকটা আমলে নেওয়া হয়।
বর্তমানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের এসব গুণাবলী নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন, তবে সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করা উচিত, যে ফিচার দরকার সেটিই বেছে নিন, যা অদরকারি তা নিয়ে বেশি চিন্তার দরকার নেই। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তির অবাক করা অগ্রগতির সম্ভাবনাও রয়েছে। ততদিন, আঙুলের ছাপ সঠিকভাবে নিবন্ধন করুন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বেছে নিন ও হাতে থাকা প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার করুন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।