মুফতি জাকারিয়া হারুন : ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান নামাজ। নামাজ শব্দটি ফারসি ভাষার। আর আরবি ভাষায় সালাত বলা হয়। এটি দৈনিক সময়মতো আদায় করতে হয়। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধি-জ্ঞানসম্পন্ন নারী ও পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ কায়েম করা মুমিনদের জন্য ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, আর যারা তাদের নামাজে যত্নবান তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ, যারা ফেরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সুরা মুমিনুন, আয়াত ৯-১১)।
নামাজ যেভাবে এলো, সে কথা বুখারি শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘তিনি বলেছেন, আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হলো। তারপর জিবরাইল (আ.) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দিয়ে ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে এসে আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন।
প্রখ্যাত সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, ‘আবু জর (রা.) উল্লেখ করেন যে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানগুলোতে আদম (আ.), ইদ্রিস (আ.), মুসা (আ.), ঈসা (আ.) ও ইব্রাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ পান। তবে আবু জর (রা.) সেসব স্থান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। শুধু এটুকু উল্লেখ করেছেন যে তিনি আদম (আ.)-কে দুনিয়ার আকাশে ও ইব্রাহিম (আ.)-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন।’
‘পরে যখন দুনিয়ার আকাশে এলাম জিবরাইল (আ.) আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, আপনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, আমি জিবরাইল (আ.)। (আকাশের রক্ষক) বললেন, আপনার সঙ্গে কি কেউ রয়েছেন? জিবরাইল (আ.) বললেন, হ্যাঁ, মুহাম্মদ (সা.) রয়েছেন। রক্ষক তখন বললেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরাইল (আ.) বললেন, হ্যাঁ।
‘এরপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেয়া হলো, আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম, তখন দেখি সেখানে একজন বসে আছেন যার ডানে এবং বায়ে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে। তিনি ডানদিকে তাকালে হেসে উঠছেন, আর বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন। তিনি বললেন, স্বাগত, হে সৎ নবী ও সৎ সন্তান। আমি জিবরাইল (আ.) কে প্রশ্ন করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আ.)। তার ডানে-বাঁয়ে রয়েছে তার সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতি, বাঁ দিকের লোকেরা জাহান্নামি। তাই ডানে তাকালে তিনি হাসছেন, বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন।
‘এরপর জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। তারপর এর রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এই রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেয়া হলো।’
আনাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) যখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ইদ্রিস (আ.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইদ্রিস (আ.) বলেন, বাহ্, ও ভাই, ও পুণ্যবান নবী। আমি (রসুলুল্লাহ) বললাম, তিনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন ইনি হচ্ছেন ইদ্রিস (আ.)।
‘এরপর আমি মুসা (আ.)-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, বাহ্, হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি মুসা (আ.)।
‘অতঃপর আমি ঈসা (আ.)-কে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি প্রশ্ন করলাম, তিনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, তিনি ঈসা (আ.)। তারপর আমি ইব্রাহিম (আ.)-কে পেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে পুণ্যবান নবী ও পুণ্যবান সন্তান। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি ইব্রাহিম (আ.)।’
ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হাজম (রহ.) আমাকে বলেছেন যে, ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আল-আনসারী উভয়েই বলতেন, ‘নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর আমাকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। এমন একটি সমতল স্থানে নেয়া হলো যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পেলাম।’
ইবনে হাজম ও আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন যে, ‘নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তারপর আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা (আ.)-কে পার হওয়ার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা (আ.)-কে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।
“তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেয়া হলো। আবারও মুসা (আ.)-এর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, ‘এই পাঁচটিই (পুণ্যের হিসেবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না।’ আমি আবার মুসা (আ.)-এর কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেকবার যান। আমি বললাম, আরেকবার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরাইল (আ.) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।”
মহান আল্লাহ এইভাবে মিরাজের রাতে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত করে উম্মতের জন্য উপহারস্বরূপ দান করেছেন। আর মানুষের জন্য প্রতি দিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।