বিনোদন ডেস্ক : ভারতীয় দলের ক্রিকেটার মুহাম্মদ শামির বিরুদ্ধে স্ত্রী হাসিন জাহানের করা মামলায় সোমবার রায় শুনিয়েছেন দেশটির আলিপুরের আদালত। বিচারক জানিয়েছেন, হাসিনকে মাসে মাসে ৫০ হাজার রুপি করে দেবেন শামি।
রায়ের সূত্র ধরে আবার শিরোনামে উঠে এসেছেন ভারতের এই পেসার। বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ রুপি দাবি করেছিলেন হাসিন। কিন্তু বিচারক ৫০ হাজার রুপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্ত্রীর সঙ্গে শামির বিবাদ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। ওই বছরেই গার্হস্থ্য হিংসা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাসিন।
অথচ, শামি-হাসিনের সম্পর্কে প্রথম দিকে এমন তিক্ততা ছিল না। বরং একে অপরের প্রেমে এক সময় হাবুডুবু খেতেন তারা। প্রেমের সেই টানে ফিকে হয়ে গিয়েছিল বয়সের ফারাকও।
শামি এবং হাসিনের মধ্যে বয়সের ফারাক ১০ বছরের। শামির থেকে হাসিন ১০ বছরের বড়। কিন্তু বয়সের এই মাপকাঠি তাদের প্রেমে বাধা দেয়নি। দু’বছর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের পর গাঁটছড়া বাঁধেন তারা।
২০১২ সালে আইপিএল চলাকালীন হাসিনের সঙ্গে শামির পরিচয় হয়। পেসার শামি সেই সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের দলে খেলতেন। হাসিন তখন মডেলিং করতেন।
বন্ধুত্ব ক্রমে গাঢ় হয়। বছর দুয়েক প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তারা। এরপর ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে তাদের কন্যা আইরার জন্ম হয়।
প্রথম দিকে সংসার নির্ঝঞ্ঝাট থাকলেও বিয়ের চার বছরের মাথায় তিক্ততা দানা বাঁধে শামি-হাসিনের সম্পর্কে। স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ তুলে থানায় যান হাসিন।
হাসিনের অভিযোগ ছিল, ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে যুক্ত শামি। পাকিস্তানি এক নারীর কাছ থেকে নাকি তিনি অর্থ নিয়েছিলেন। শামি একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলেন হাসিন।
তার অভিযোগের পর ভারতীয় দলের সঙ্গে শামির চুক্তি বাতিল করে বিসিসিআই। পরে অবশ্য পুনরায় শামির সঙ্গে চুক্তি করে ক্রিকেট বোর্ড। ম্যাচ গড়াপেটার তদন্তে ক্লিনচিট পান শামি।
শামি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় ছিল হাসিনের। তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শামির পরিবারের সদস্যরা তাকে খুন করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি শামির ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন হাসিন।
হাসিনের আরও অভিযোগ ছিল, বেঙ্গালুরু, পুনে, নাগপুরের মেয়েদের সঙ্গে শামির সম্পর্ক রয়েছে। তার দাবি, লন্ডনের এক ব্যবসায়ীর সূত্রে এই নারীদের সঙ্গে শামির পরিচয় হয়।
শামির সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট এবং ফোন কলের রেকর্ডিং পুলিশের হাতে প্রমাণ হিসেবে তুলে দিয়েছিলেন হাসিন। তিনি দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর দুবাইতে গিয়ে এই নারীর সঙ্গে শামি দেখা করেন।
স্ত্রীর সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছিলেন শামি। তিনি জানান, তার বদনাম করতে, ক্রিকেট ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হাসিন এসব মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।
বীরভূমের বাঙালি মুসলিম পরিবারের মেয়ে হাসিন। ২০০২ সালে তার বিয়ে হয় সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শেখ সইফউদ্দিনের সঙ্গে। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে ঘর করার পর ২০১০ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন হাসিন। উচ্চশিক্ষার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু তাতেই নাকি বাধা দেন প্রথম স্বামী এবং তার পরিবারের সদস্যরা। যে কারণে তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। বীরভূম থেকে কলকাতায় চলে আসেন হাসিন।
কলকাতায় এসে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হাসিন। ২০১৮ সালে ‘সরি’ নামের একটি ছবিতে তাকে অভিনয় করতেও দেখা যায়।
মডেলিং ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে আইপিএল চলাকালীন শামির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় হাসিনের। তবে টিকল না সেই দ্বিতীয় বিয়েও।
সোমবার হাসিনের মামলায় আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে খুশি নন হাসিন। মাসিক ১০ লাখ রুপির পরিবর্তে মাত্র ৫০ হাজার রুপি পেয়ে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন তারা।
আলিপুর আদালতের বিচারক অনিন্দিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে হাসিনকে ৫০ হাজার রুপি করে দেবেন শামি। ২০১৮ সালে এই মামলা শুরু হওয়ার সময় থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে। অর্থাৎ ওই বছরের মার্চে মামলা হওয়ার সময় থেকে বকেয়া অর্থ শামিকে মেটাতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।