হৃদয় আহমেদ : প্রিয়তমার পর প্রযোজক আরশাদ আদনান এবং নির্মাতা হিমেল আশরাফের ঈদ-উল-ফিতরের উপহার ‘রাজকুমার।’ রাজকুমার নিয়ে দর্শকদের শুরু থেকেই আগ্রহ ছিলো তবে প্রথম গানটা আসার পর দর্শকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর ছবির ট্রেলারও রিলিজ করা হয়নি যেকারণে দর্শকরা একটু মনঃক্ষুন্ন হয়েছিল। তবে সিনেমাহলে কি ‘রাজকুমার’ দর্শকদের খুশি করতে পেরেছে?
হিমেল আশরাফ ‘রাজকুমার’ সিনেমা দিয়ে দর্শকদের অনেকটাই সারপ্রাইজ করেছে বা সামনে যারা দেখবে তারাও সারপ্রাইজ পাবেন।
হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ সুপারহিট হলেও গল্প এবং চিত্রনাট্যের জন্য কিছুটা সমালোচিত হয়েছিল তবে এবার হিমেল আশরাফ তাঁর গল্পে এবং চিত্রনাট্যে ত্রুটি না রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। অবশ্য তাতে তিনি অনেকটা সফলও হয়েছেন। ‘রাজকুমার’ দিয়ে দর্শকরা নতুন এক নির্মাতা হিমেল আশরাফকে খুঁজে পাবে।
‘রাজকুমার’ ছবির গল্প শামসু (শাকিব খান) নামের এক তরুণকে ঘিরে।
যে স্বপ্ন দেখে আমেরিকায় পাড়ি দিবে তবে সে বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। শামসু তাঁর বাবাকেও রাজি করাতে ব্যর্থ তবে একদিন ফাঁদে ফেলে সে তাঁর বাবাকে আমেরিকা যাওয়ার টাকার জন্য রাজি করিয়ে ফেলে। তবে বাঁধ সাজে ভিসা! কিভাবে পাবে আমেরিকার ভিসা? এক দালালের মাধ্যমে কথা বলে পথ বের করে আমেরিকা যাওয়ার তবে সেটা এক আমেরিকান তরুণীর সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের মাধ্যমে। তবে শামসু আমেরিকা যেতে কেন এতো উতলা?
এর পিছনে রয়েছে ইমোশনে ভরপুর এক গল্প।
যা দর্শকদের হাঁসাবে, আনন্দ দিবে এবং কাঁদাবে! ছবির চিত্রনাট্যের তিনটা ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে দেখানো হয় শামসুর আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা, দ্বিতীয় ভাগে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করে আমেরিকা গমন এবং পরিশেষে মূল গল্প (স্পয়লারের কারণে সেটা বলছি না)।
প্রথমার্ধে চিত্রনাট্য যতটাই সহজ-সরল হাস্যরসে ভরা- দ্বিতীয়ার্ধে ঠিক ততটাই আবার ইমোশনে ভরপুর। চিত্রনাট্যে ছোটখাটো কিছু দূর্বলতা রয়েছে। দু’তিনটা দৃশ্য অহেতুক লম্বা করা হয়েছে যেকারণে কিছুটা বোরিং লাগতে পারে।
পাশাপাশি গানের প্লেসমেন্টেও সমস্যা রয়েছে। তবে সর্বোপরি একটা ভালো চিত্রনাট্য বলা যায় রাজকুমারের। প্রিয়তমার চিত্রনাট্যে যে ঘাটতি ছিলো সেই ঘাটতি এখানে চোখে পড়বে না। ছবির সংলাপ বেশ ভালো লাগবে দর্শকদের। দেশপ্রেমের একটা এঙ্গেল রয়েছে ছবির এই বিষয়টাও ভালো লাগবে দর্শকদের। খুব মজাদার কিছু সংলাপ যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি অনেক হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়ার মতো সংলাপও আছে। ছবির গল্প, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ হিমেল আশরাফের নিজের; এবার এই জায়গায় দর্শকদের থেকে মোটামুটি ভালো মার্কস পাবে তিনি।
অভিনয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্যই শাকিব খানের কথা প্রথমে বলতে হয়। প্রথমদিকের কিছু কমেডি দৃশ্যে তাঁর এক্সপ্রেশনের বিষয়টুকু বাদ দিলে বেশ ভালো অভিনয়ই করেছেন শাকিব খান। বিশেষ করে ইমোশনাল দৃশ্যতে বেশি নিখুঁত ছিল। রোমান্টিক দৃশ্যতে ভালো করলেও কোর্টনি কফির অভিনয়ের জন্য দর্শকরা কিছুটা বিচলিত হবে। যদিও নির্মাতার দাবি ছিলো কোর্টনি কফি থিয়েটার আর্টিস্ট কিন্তু তাঁর অভিনয়ের জন্য দর্শকদের কাছে হয়তো এই কথাটা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। পুরো ছবিতে অনেকটা কৃত্রিম অভিনয় করেছে কোর্টনি কফি যেকারণে তাঁর অভিনয় চোখে লাগে। শাকিব খানের বাবার চরিত্রে তারিক আনাম খান বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। পুরো ছবিতেই তাঁর রাগান্বিত চেহারা, কথা বলার ধরণ এবং শেষের দিকে তাঁর আকুতির দৃশ্য বেশ সাবলীল ছিলো।
তবে স্পেশালি দুটো মানুষের কথা না বললেই নয়। আরশ খান এবং মাহিয়া মাহি। শাকিব খানের ইয়াং বাবার চরিত্রে আরশ খান দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। তারিক আনাম খানের সাথে তাঁর চেহারার অনেকটা মিল থাকার জন্যই হয়তো আরশ খানকে চুজ করা হয়েছিলো যুবক বয়সী বাবার চরিত্রে। তবে আরশ খান তাঁর অভিনয়ে দর্শকদের অনেকটা তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মায়ের চরিত্রে মাহিয়া মাহিও বেশ ভালো করেছে। তাঁর কথা বলার ধরণ, অভিনয় ভালো ছিলো। পাশাপাশি অন্যান্য অভিনেতা যারা ছিলেন যেমন- ডাঃ এজাজুল ইসলাম, আহমেদ শরীফ, আরফান মৃধা শিবলু এবং ডিজে সোহেল; তারাও তাদের চরিত্র দিয়ে দর্শকদের বিনোদিত করতে পেরেছেন।
ছবির টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে- রাজিবুল ইসলামের চিত্রগ্রহণ ঠিকঠাক ছিল, বিশেষ করে বাংলাদেশ অংশের কাজ ভাল। তবে আমেরিকায় যে দৃশ্যধারণ করেছে সিনেমাটোগ্রাফার তা অনেকটা চোখে লাগে। ইমন সাহার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ঠিকঠাক ছিল, দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্য। তবে সমস্যা ছিল গানে বিশেষ করে রাজকুমারের টাইটেল গানটার কথা আর সুর মনে ধরেনি অনেকে দর্শকের। সেই সাথে বালাম, কোনালের রাজকুমার গানটা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে ছবিতে ‘বরবাদ’ গানটা দর্শকরা উপভোগ করবে, পাশাপাশি মাকে নিয়ে একটা গান আছে যা দর্শকদের আবেগতাড়িত করে তুলবে। ছবির মেকআপে দর্শকরা কিছুটা সমস্যা অনুভব করতে পারে। তবে সম্পাদনা ভালো হয়েছে। যদিও অ্যাকশন ভালো হয়নি বলেই মনে করতে পারে অনেকে! একটা অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে তবে সেটা পুরোটাই স্লো-মোশন দিয়ে দূর্বল করে ফেলেছে। বাদবাকি হিমেল আশরাফের নির্মানে পরিপক্বতা এসেছে অনেক। রাজকুমারের মেকিং বেশ ভালো ছিল, যার জন্য অবশ্যই হিমেল আশরাফ বাহবা পাবে দর্শকদের কাছ থেকে।
পরিশেষে এতটুকু বলা যায়, প্রযোজক আরশাদ আদনান এবং নির্মাতা হিমেল আশরাফ দর্শকদের একটা সুন্দর-সামাজিক এবং সাবলীল ছবি উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। স্যোশাল মিডিয়াতে অনেকে রাজকুমার নিয়ে অনেক উড়ো কথা ছড়াচ্ছে। তবে দর্শক হিসেবে আমাদের সিনেমাহলে গিয়ে ছবি দেখে তারপর মতামত দেওয়াটা সবচেয়ে শ্রেয় হবে। আলোচনা অথবা সমালোচনা একটা ছবির জন্য ভালো তবে সেটা অবশ্যই গঠনমূলক হওয়া দরকার। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রের পালে উন্নতির হাওয়া লেগেছে। যেখানে আগে বছরের প্রায় সব চলচ্চিত্র ভারতীয় সাউথ ছবির রিমেক হতো সেখানে এখন আমাদের দেশের তরুণ নির্মাতারা একের পর এক মৌলিক এবং ভালো গল্প আমাদের উপহার দিচ্ছে। দর্শক হিসেবে আমাদের এখন কর্তব্য হচ্ছে ভালো ছবিগুলোকে সমর্থন করা। যাতে নতুন প্রযোজক এবং নির্মাতারা সামনে আমাদের আরও ভালো কাজ উপহার দিতে পারে। তাই আপনিও দেখে নিতে পারেন, ঈদে শাকিব খানের উপহার ‘রাজকুমার।’ সূত্র : কালের কন্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।