বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই গণনায় সাহায্য করেছে। তেজস্ক্রিয় পরমাণু থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হতে থাকে। একে বলে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়। তেজস্ক্রিয় মৌল তেজস্ক্রিয় ক্ষয় করে সম্পূর্ণ অন্য মৌলে পরিণত হয়।
যেমন ইউরেনিয়ামের কথা ধরা যাক। তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম রশ্মি ক্ষয় করে সিসায় পরিণত হয়। তবে এই তেজস্ক্রিয় ক্ষয়টা একবারে হয় না। হয় নির্দিষ্ট হারে।
তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের এই হারটা একেক তেজস্ক্রিয় পদার্থের জন্য একেক রকম।
তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের হিসাবে আসে অর্ধায়ু নামে একটা শব্দ। কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধেক ক্ষয় হতে যত সময় লাগে তাকে ওই পদার্থের অর্ধায়ু বলে।
ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর।
ইউরেনিয়ামের পরমাণু ক্ষয় হয়ে অর্ধেকে পরিণত হতে সময় লাগে ৪৫০ কোটি বছর। তার মানে ৪৫০ কোটি বছরে এক লাখ পরমাণু ক্ষয়ে ৫০ হাজার ইউরেনিয়াম অবশিষ্ট থাকে। বাকি ৫০ হাজার পরমাণু সিসার পরমাণুতে রূপান্তরিত হবে। এখানে এক লাখ গুরুত্বপূর্ণ নয়। ১০০ পরমাণুর একটা ইউরেনিয়াম খণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে ৪৫০ কোটি বছর পর ৫০টি ইউরেনিয়াম অক্ষত আছে, বাকি ৫০টি সিসায় পরিণত হয়েছে।
অর্থাৎ যত পরমাণুই নেওয়া হোক, তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম অর্ধেকে পরিণত হতে সময় লাগে ৪৫০ কোটি বছর। একে ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু বলে। অনেকেই ভাবছেন, ৪৫০ কোটি বছরের হিসাব কিভাবে বের হলো? অত দিন তো মানুষ বাঁচে না!
মানুষ বাঁচে না- এটা ঠিক। তার পরও বের করার একটা পদ্ধতি আছে। আছে একটা গাণিতিক সমীকরণ। প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্ষয় হচ্ছে, তা হিসাব করে ওই গাণিতিক সমীকরণে বসানো হয়। সেখান থেকে যে ফল বেরোয়, সেটাই তার অর্ধায়ু। এই সমীকরণটা যে ঠিক, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যেসব তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধায়ু কম তাদের ক্ষেত্রে। যেমন কোনো পদার্থের অর্ধায়ু হয়তো কয়েক ঘণ্টা। কারো হয়তো কয়েক দিন। কারো কারো কয়েক বছর। এদের ক্ষেত্রে সমীকরণটার সত্যতা প্রমাণিত। তাই ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রে ওই সমীকরণটা হিসাব দেখিয়েছে সেটাও ঠিক।
পৃথিবীর তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন শিলাখণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সবগুলোতেই একটা জিনিসের মিল আছে। তা হলো, এর অর্ধেক ইউরেনিয়াম অর্ধেক সিসার। তার মানে দুনিয়ার সব ইউরেনিয়াম শিলাখণ্ড এখন অর্ধায়ুতে অবস্থান করছে। তার মানে এদের বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। অর্থাৎ প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে এসব শিলাখণ্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। শিলাখণ্ডগুলো সৃষ্টির সময়কে যদি পৃথিবী সৃষ্টির সময় ধরে নেওয়া হয়, তা হলে এর বয়স ৪৫০ কোটি বছরের কিছু বেশি হবে।
সূত্র : ফিজিকস ওয়ার্ল্ড
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।