জুমবাংলা ডেস্ক : নতুন ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী, এখন থেকে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ক্রলিং পেগ কী এবং কীভাবে এর মাধ্যমে ডলারের দাম নির্ধারণ হবে সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন অনেকেই।
সম্প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, এতদিন ডলারের দাম একটি নির্দিষ্টে অঙ্কে বেঁধে দেয়া হলেও, এখন থেকে এটি নির্দিষ্ট না রেখে একটি সীমারেখার মধ্যে উঠানামা করতে দেয়া হবে- যা মূলত ‘ক্রলিং পেগ পদ্ধতি’ নামে পরিচিত।
ডলারের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি
সাধারণত ডলার বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়; হার্ড পেগ এবং সফট পেগ। হার্ড পেগ পদ্ধতিতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রার মান নিজে ঠিক করে দেয় এবং সে অনুযায়ী লেনদেন হয়। আর সফট পেগ পদ্ধতিতে বাজারের ওপরে মুদ্রার মান ছেড়ে দেয়া হয়। তবে সরকার বা ব্যাংক চাইলে সফট পেগ পদ্ধতিতে ডলারের একটি সম্ভাব্য দাম ধরে দিতে পারে।
এছড়া অনেক দেশে ডলারের মান সম্পূর্ণ বাজারমুখী রাখতে এবং হস্তক্ষেপবিহীন মান নির্ধারণে ‘ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট’ ব্যবহার করা হয়। এতে বাজার ও অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলারের দাম ওঠানামা করে।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতি
এসব পদ্ধতির বাইরে অর্থনীতিতে নিজ দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রকট আকার ধারণ করলে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার মান নির্ণয় করা হয়। এই পদ্ধতিতে ডলারের একটি সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম ধরে দেয়া হয়।
এর ফলে না ডলারের দাম একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে, না আকাশচুম্বী আকার ধারণ করে। মূলত অস্থিতিশীল মুদ্রাবাজারে সমতা আনতে আপদকালীন পদ্ধতি হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে ডলারের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই বছর ধরে বাজারে এক রকমের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই বিরাজমান অস্থিরতার কারণে ৮০ টাকা দরের ডলারের দাম ১১০ টাকায় উঠে গেছে। যদিও ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দাম ১১০ টাকা, তবে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতি কী পারবে ডলারের বাজারে স্বস্তি আনতে?
ডলারের বাজারে এই অস্থিরতা প্রশমনে ক্রলিং পেগ কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ডলার সংকটের মূল কারণ উদঘাটন না করে শুধু ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারে ভারসম্য আনা অসম্ভব।
তিনি বলেন, ডলার সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে, যারা ডলার আয় করছেন তারা দেশে ডলার না পাঠিয়ে বিদেশে হয় বিনিয়োগ করছেন অথবা সুইস ব্যাংকের মতো বিদেশি ব্যাংকে জমা করছেন। দেশে ডলার না পাঠানোর কারণ হচ্ছে, এরা ডলার পাঠিয়ে আশানূরূপ লাভ পাচ্ছেন না, আর না হলে নিজের টাকার অঙ্কে যে সম্পদ আছে তা ডলারে রূপান্তর করলে সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
আকাশ বলেন, গত কয়েক বছরে টাকার লাগাতার অবমূল্যায়নের কারণে দেখা গেছে ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ বা মুনাফা মিলিয়ে যা লাভ হয়, শ্রেফ টাকাকে ডলারে রূপান্তর করলে তার থেকে বেশি লাভ হয়। টাকা এবং ডলারের এ ব্যবধান কমিয়ে না আনলে কোনোভাবেই ক্রলিং পেগ পদ্ধতি কাজে আসবে না। আগে ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে, পরে পদ্ধতি কাজে আসবে কিনা সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে বাংলাদেশে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দাম কী হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।