লাইফস্টাইল ডেস্ক : আজকাল অনেক অভিভাবক শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দিচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে সময় দিচ্ছে সন্তান। অধিকাংশ সময় এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে শিশুমনে। একইসঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে চোখ এবং মস্তিষ্কের ওপরও। মোবাইলে গেমিং ও ভিডিও দেখার সময় শিশুমনে আনন্দ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হলেও কল্পনাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব সমস্যা মারাত্মক হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেসব ক্ষতি হচ্ছে
১. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটানোয় শিশুরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা—যেমন চোখ, মানসিক চাপ, নিদ্রাহীনতা ও মেধা বিকাশের সমস্যায় পড়ে। ফোন নিয়ে বসে থাকলে শারীরিক কার্যক্রম কমে যায়। শিশুদের মধ্যে শরীরের চালনাশক্তি ও মনঃসংযোগ ক্ষমতা লোপ পায়।
২. বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করা কিংবা গল্পের বই পড়া আজকাল শিশুরা প্রায় ভুলতেই বসেছে। স্মার্টফোন আসক্তির কারণে ধৈর্য ধরে পাঠ্যবই বা গল্পের বই পড়ে বুঝতে পারার দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে শিশুরা।
৩. দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোনে চোখ আটকে থাকার কারণে শিশুদের ঘুমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশি সময় মোবাইলের আলোর সামনে থাকলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব শিশু স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে, তাদের মস্তিষ্কের গঠনও আলাদা হয়।
৪. বর্তমানে সাইবার বুলিং একটি বড় সমস্যা। যা কিশোর বয়সে মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয় অনেক শিশুকে। অভিভাবকদের অজান্তেই শিশুর মনে এই খারাপ প্রভাব পড়তে পারে স্মার্টফোনের মাধ্যমে।
৫. অতিরিক্ত ফোনের ব্যবহারের জন্য ঘুম কম হওয়ায় মনে রাখার ক্ষমতা, ভাবনার যোগ্যতা ও চিন্তা করার সামর্থ্য লোপ পায়। এতে শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়।
অভিভাবকদের ভূমিকা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের স্মার্টফোনের ব্যবহার শুরু হয় তার অভিভাবকদের হাতেই। চাইলে অভিভাবকরাই পারেন সন্তানকে মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বের করে আনতে। বর্তমান সময়ে স্কুলের অনলাইন পড়াশোনার জন্য সন্তানদের হাতে না চাইলেও মোবাইল ফোন দিতে হচ্ছে। আবার অনেক পরিবারে মা-বাবাকে কাজের প্রয়োজনে বাইরে থাকার কারণে বাড়িতে বাচ্চার কাছে ফোন থাকা জরুরি। তবে প্রয়োজন ছাড়া সারা দিনে ফোনের পেছনে সে কতক্ষণ সময় ব্যয় করছে, সেদিকে নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের।
১. স্মার্টফোন ছাড়াও দুনিয়াতে আনন্দের আরও অনেক কিছু রয়েছে। তাই স্মার্টফোনের বদলে সেসব দিকে শিশুর ঝোঁক বাড়াতে হবে।
২. শিশুর মোবাইল ফোন আসক্তি কাটানো খুব সহজ নয়। মোবাইলের বিকল্প ও আকর্ষণীয় জিনিসের প্রতি আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতে পারলে তবেই শিশুর এই আসক্তি কমবে। ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা কোনো বাদ্যযন্ত্রের প্রতি শিশুর কৌতূহল থাকলে সেই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।
৩. সন্তানকে পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখানো ও বিভিন্ন রহস্য-রোমাঞ্চকর গল্পের প্রতি ঝোঁক তৈরি করানো উচিত।
৪. সন্তানকে সময় না দিয়ে হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া বা টিভিতে কার্টুন চালিয়ে দেওয়াটা অনুচিত। অনেক শিশু একাকিত্বের কারণে মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের প্রথমত খেয়াল রাখা উচিত শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করেও প্রতিদিনের কার্যকারিতা সঠিকভাবে পালনে সক্ষম কিনা।
৫. বাড়িতে পড়াশোনা ও খেলাধুলার পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একদিন বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের শিশুটির সঙ্গে সময় কাটানো দরকার।
কতক্ষণের জন্য স্মার্টফোন দেবেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) জানিয়েছে, বাচ্চা যত ছুটবে এবং খেলবে তাতে ভালো থাকবে তার ভবিষ্যৎ। এ জন্য স্মার্টফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কত সময় কাটাবে শিশু, তা নিয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
১. দেড় বছরের কম বয়সী শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। এমনকি তাদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করাও ঠিক না।
২. দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের বেশি করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে ব্যস্ত থাকা উচিত। খেলাধুলাসহ নানা কাজে শিশুদের নিযুক্ত করুন।
৩. দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের দিনে এক ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন দেখতে দেওয়া উচিত না।
তবে আমেরিকার সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, স্মার্টফোনে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। , দিনে মাত্র এক ঘণ্টা স্ক্রিনে কাটানোই দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ন করে তোলায় যথেষ্ট হতে পারে। তাই কোন বয়সে শিশুর হাতে স্মার্টফোন দেবেন তা ঠিক করতে হবে অভিভাবককে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ফোর্বস, এএসিএপি, ডেইলি মেইল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।