জুমবাংলা ডেস্ক : এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো পেঁয়াজে ঠাসা। তারপরও লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম খুচরায় কেজিপ্রতি ৮০ টাকার নিচে থাকলেও শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। একইভাবে আলুর দামে রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে। গত ৫০ বছরে আলুর দাম এত হয়নি। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কোনো পণ্য মিলছে না। সবজির দামও অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সরকার কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় কৃষক পর্যায়েই দাম বেশি। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ সংকটে নতুন করে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে কষ্টে আছেন স্বল্প আয়ের লোকজন।
ক্রেতারা বলছেন, সরকার কোনো পণ্যের দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করেন। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করার যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে টানা সাত দিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। এতে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে হয়েছে। তা ছাড়া সরবরাহ কমে যাওয়ায় আলুর দামও বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ডিম-এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছিল-প্রতিকেজি আলুর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য হবে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম হবে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন পর্যায়ে দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ১২ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার তদারকির অভাবে কিছু অসাধু আড়তদার পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কয়েকদিনের ব্যবধানে সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৯২ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকার বেশি।
এছাড়া দেশি রসুন কেজিতে ১৪৪ থেকে ১৮৬ শতাংশ দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সময়ের ব্যবধানে আমদানিকৃত রসুন ২৮ থেকে ৫৪ শতাংশ দাম বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৯০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও ডিম বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা। বেশ কিছুদিন ধরে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে আলু-পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না দামে। স্বস্তি নেই কাঁচাবাজারেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্য কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার কামরুল হাসান রুবেল জানান, পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বাড়ছে। কয়েকদিন পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল না। হয়তো এ কারণে বাড়ছে। তবে আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
গত এক বছরের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আলু কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। রিয়াজ উদ্দিন বাজারের আলুর আড়তদারদের ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট পুরো চট্টগ্রামের আলুর বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেটটি। রিয়াজউদ্দিন বাজারে আলু সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও আলুর দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বাজারদর: নিম্নআয়ের মানুষ আগে মাছ ও মাংস কিনতে হিমশিম খেত। মাছ-মাংস কেনা দূরের কথা, শীতকালীন সবজি কিনতে পারছেন না। বাজারে শীতকালীন সবজি থাকলেও দাম আকাশচুম্বী। নগরীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন ১১০ টাকা থেকে ১২০, পটোল ৮০, করলা ৮০, ঢেঁড়শ ৮০, ঝিঙে ৬০, পেঁপে ৬০, ধুন্দল ৭০, বাঁধাকপি ৭০, ফুলকপি ১২০, মরিচ ২০০, বরবটি ১২০, মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৮০ থেকে একশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। কক মুরগি ২৮৮-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। মাঝারি চিংড়ি প্রতিকেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। মাছের বাজারে প্রতিকেজি পাঙাশ ২৩০, তেলাপিয়া ২০০, পাবদা ৪শ, পোয়া ৪৫০, কই ২৪০, রুই ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।