জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের পেছনে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ৭০২ টাকা। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে এক ধরণের বৈষম্য তৈরি করছে বলে অভিমত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রতি যে ব্যয় করা হয়, সে তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় অনেক কম। ফলে এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। অথচ উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী প্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৫ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী প্রতি বেশি ব্যয়ের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় । শিক্ষার্থী প্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে শিক্ষার্থী প্রতি কম ব্যয়ের দিক থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় ৩ হাজার ৪১৫ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী প্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার ২২ টাকা। কম ব্যয়ের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় হয়েছে ৪৪ হাজার টাকা।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল বৃদ্ধি করে ব্যয় বৃদ্ধি করে। আবার প্রয়োজনের তুলনা অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়। এতে তাদের ব্যয়ের খাত বৃদ্ধি পায়। এই অসামঞ্জস্যতা দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর করা উচিত বলে অভিমত তাদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়র সামগ্রিক ব্যয় অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আমাদের দেশের কৃষি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় তুলনামূলক বেশি। তাদের অনেক গবেষণা করতে হয়। এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধা নেই, লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। এর ফলে তাদের ব্যয় কম। তবে এক সময় এই ব্যবধান কমে আসবে।
সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বরাদ্দ হিসেব করে দিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট দেয়া হয়, তখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি ফারাক না থাকে। কেননা কম বরাদ্দ দিলে সেখানে শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার একটা শঙ্কা তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যমূলক শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয়ায় একটা সামঞ্জস্যতা আনতে হবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় নিম্নরূপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ এক হাজার ৭৭৮ টাকা, বুয়েটে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৭ টাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯০ টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা, শাবিপ্রবিতে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৯১ হাজার ৩০৯ টাকা, হাবিপ্রবিতে ৯২ হাজার ২৪২ টাকা, মাভাবিপ্রবিতে এক লাখ ৫৩ হাজার ১৭৮ টাকা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০ টাকা, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৮ হাজার, চুয়েটে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা, রুয়েটে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৯ টাকা, কুয়েটে ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ডুয়েটে ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৫ টাকা, নোবিপ্রবিতে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৩১ টাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮১ হাজার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭১ হাজার ৫৬৯ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।