রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : এবার বৈশাখের তাপে দেশ যখন হাঁসফাঁস করছিল, বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল আকাশে; তখন কৃষক শুধু কায়মনে চাচ্ছিল– এখনই বৃষ্টি না ঝরুক। তখন গ্রীষ্মের গরমে পাক ধরছিল যে বোরো ধানে! স্রষ্টা বোধহয় চাষিদের প্রত্যাশাই পূরণ করেছেন। এর ফল হিসেবে এখন
সবচেয়ে বড় ফসলি মৌসুম চলছে দেশে। কৃষকের উঠোন ভরে গেছে সোনালি ধনধান্যে। ফসল কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ে ব্যস্ত এখন গোটা দেশের চাষি পরিবার।
কিন্তু কৃষকের কায়িক শ্রমে-ঘামে ঘরে তোলা এই বোরো ফসলে আসলে কেমন লাভ হয় তাঁদের? এতে কি শুধু ভাতটাই জোটে? নাকি খোরাকি বাদে বাকি বছর চলার কিছু উপরিও থাকে চাষি পরিবারের?
এমন প্রশ্নের জবাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে কৃষকদের কাছ থেকে। যাঁরা কামলা নিয়ে চাষবাস করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, বোরো ফসলে যে পরিমাণ খরচ, তা মিটিয়ে খোরাকিটা থাকে। আর যাঁরা নিজের জমিতে নিজেই খেঁটেছেন, তাঁদের কথা, খরচ বাঁচিয়ে নিজের বিনিয়োগ করা শ্রমের মজুরিটুকুই উপরি থাকে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রামের শামসুল ইসলাম বিঘা পাঁচেক জমিতে এবার বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। বেশির ভাগ জমিতে কামলা নিয়েছেন। নিজেও খেঁটেছেন কিছু জমিতে। নিজের সেচযন্ত্রও রয়েছে।
শামসুল বলেন, সব মিলিয়ে বোরো ধান চাষ করে খুব বেশি লাভ থাকে না। তবে বছর জুড়ে যে খাবার খেতে হয়, তা উঠে আসে এই আবাদে। এটা তো বড় ব্যাপার।
প্রান্তিক এই কৃষক ব্যাখ্যা করেন, এবার তাঁর জমিতে বিঘাপ্রতি ব্রি ২৮ ধানের ফলন হয়েছে ১৫-১৬ মণ। বাজারে এর দাম মণপ্রতি ১ হাজার হিসেবে হাজার ১৫ টাকা। এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে লাগে প্রায় ২ হাজার টাকা। কামলা ও সারবাবদ আরও ৫-৭ হাজার টাকা চলে যায়। ফলে প্রায় হাজার দশেক টাকা মাস তিনেক বিনিয়োগের পর উঠে আসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
‘খোরাকি বাদে বিঘাপ্রতি এই ৫ হাজার টাকাই লাভ’, বলছিলেন শামসুল আলম।
একই উপজেলার নাকাইহাট ধান কেনাবেচার বড় মোকাম। এখানে ধানের ব্যবসা করেন মোজাফফর আহমদ। তিনি জুমবাংলাকে জানান, গত সপ্তাহের শুরুতে তাঁরা ব্রি ২৮ ধান ১ হাজার ৫০ টাকা মণ কিনেছেন। এখন প্রতিমণ কিনছেন ১ হাজার ২০ টাকা করে।
পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামের বর্গাচাষি শাহ আলম এবার বিঘা তিনেক জমিতে গুটি স্বর্ণা ধানের আবাদ করেছেন। তাঁর ধান কাটা শেষ। এখন মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজ করছেন। কিছু ধান বিক্রিও করেছেন।
শাহ আলম বলেন, তিনি জমিতে নিজেই কাজ করেন। ফলে কামলা খরচ তাঁর দিতে হয় না। কিন্তু সেচভাড়া ও সারবাবদ তাঁর বিঘাপ্রতি হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হয়। এক বিঘায় তাঁর ধান ফলেছে প্রায় ২০ মণ করে। মণপ্রতি ৮০০ হিসেবে এর দাম আসবে ১৬ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে খরচ মিটিয়ে বিঘাপ্রতি তাঁর থাকবে হাজার দশেক টাকা।
‘বিঘাপ্রতি এই হাজার দশেক টাকা দিয়ে আমন ধান না আসা পর্যন্ত তাঁর পুরো পরিবার চলতে হবে। পাশাপাশি কাপড়চোপড়সহ অন্যান্য আয়-দায়ও মেটাতে হবে।’, এই বর্গাচাষি বলেন।
শাহ আলম জুমবাংলাকে জানান, কিছু ধান বিক্রি করে তিনি এরই মধ্যে মেয়ের জামাকাপড় কিনেছেন।
একই উপজেলার ফকিরহাট মোকামে ধানের ব্যবসা করেন সাজু সরকার। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে মোটা ধান তাঁরা ৮০০ টাকা মণ কিনলেও এখন এর বাজার ৭৮০ করে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জমি থেকে ধান কেটে সড়কেই মাড়াই করছিলেন। সঙ্গে কামলারাও ছিলেন।
রফিকুল বলেন, বোরো দেশের ধান চাষাবাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম। দেশের পুরো খাদ্যশস্যের সিংহভাগ উঠে আসে এ সময়। বন্যাপ্রবণ হওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় আমন উঠে আসার নিশ্চচয়তা নেই। ফলে বোরো ধানে লাভ কতটা থাকবে, তা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ কম। এ কারণে পুরো দেশের কৃষক পরিবার এখন ধান কাটা, মাড়াইয়ে ব্যস্ত।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।