আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাহাজ ছিনতাই ও নাবিকদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়কে অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুর শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা দস্যুতার শেয়ার কেনেন। দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনার মাধ্যমেই একটি জাহাজে হানা দেয় তারা। যেকোনো জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ার আগে-পরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই সব তথ্য।
জলদস্যুরা সমুদ্রে জাহাজ নিজেদের কবজায় নেয়ার আগে তাদের সমুদ্রযাত্রায় অর্থায়নের জন্য বিনিয়োগকারী খোঁজেন। জানা যায় স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ারবাজার রয়েছে তাদের। জলদস্যুর শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা দস্যুতার শেয়ার কেনেন। এই বাণিজ্য মূলত লাভবান হয় বিনিয়োগকারীরা। যখন কোনো জাহাজ থেকে মুক্তিপণ মেলে বিনিয়োগকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা তাদের অংশ কেটে নেন। জলদস্যুরা কেবল যা অবশিষ্ট থাকে তা ভাগ করে নেয়।
স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কেনার পরেই জাহাজ দখলের নীলনকশা আঁটা শুরু করেন। এক্ষেত্রে দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে জলদস্যুরা। দস্যুদের প্রথম দলটি জাহাজ খোঁজা ও দখলে নেয়ার কাজ করে। জাহাজ পেলে তারা সেটি নিয়ে আসে সোমালীয় উপকূলে। এরপর দায়িত্ব বুঝে নেয় দ্বিতীয় দলটি। আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা পাহারা দেয় জাহাজটিকে। মুক্তিপণ না পাওয়া পর্যন্ত ক্রুদের খাবারদাবারের জোগানদিতে যুক্ত হন আরও একজন ব্যবসায়ী। যিনি মুক্তিপণের টাকার বিনিময়ে ক্রুদের দেখাশোনার খরচ বহন করেন। মুক্তিপণ পাওয়ার পর ব্যবসায়ী তার বিনিয়োগ সুদে আসলে বুঝে নেন।
তৃতীয় ধাপটি হলো আলোচনার। জাহাজ দখলে নেয়ার সাথে সাথেই জলদস্যুরা মালিকদের খুঁজে বের করার জন্য বোর্ডে থাকা নথিপত্র ঘাটতে থাকে। এরমধ্যেই ঠিক করে নেয়া হয় একজন আলোচককে। যিনি শিপিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করবেন এবং পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে শিপিং কোম্পানিগুলোরও বিমা করা থাকে। দস্যুদের সাথে বোঝাপড়া হয়ে গেলে, শিপিং কোম্পানি মুক্তিপণ পরিশোধের জন্য একটি বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানির সাথে চুক্তি করে। তবে চুক্তি হলেও, জলদস্যুরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তিপণ না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজ এবং ক্রুদের জিম্মি করে রাখে। টাকা গোনার মেশিন দিয়ে পাই পাই করে হিসাব বুঝে নেয়ার পর মুক্তি মেলে জাহাজ ও ক্রুদের।
এদিকে গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভারত মহাসাগরে দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই এমভি আবদুল্লাহ নামের একটি জাহাজকে দখলে নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষীসহ চলাচলের আন্তর্জাতিক নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। এতে কার্যত বিনা বাধায় জাহাজটিকে নিয়ন্ত্রণে নেন দস্যুরা। যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের ২৩ নাবিককে।
এদিকে, তৃতীয় পক্ষের সহায়তায় যে মধ্যস্থতার কথা বলা হচ্ছে, তাদের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন অনেক। বিশেষ করে, মুক্তিপণের বড় অংশই যাবে তাদের পকেটে। মূলত মুক্তিপণের টাকা যাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এজেন্টের পকেটে।
মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
এরপর যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইউকে এমটিও সমুদ্র চলাচলকারী অন্য জাহাজগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলে।
জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। যার নাম এমভি আবদুল্লাহ, পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই।
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রথমে নাবিকদের সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। জাহাজে নাবিকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এর আগে ২০১০ সালে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহানমণি ছিনতাই হওয়ার তিন মাস পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল গ্রুপটি। আবার কোনো জাহাজ ছয় থেকে আট মাস পর মুক্ত হওয়ার নজির রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।