আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই ক’দিন আগেই জানা গেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়েছে রেকর্ড ৪০০ বিলিয়ন ডলার। মাস্কের সাথে ব্যবধানটা অনেক বড় হলেও দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণটাও নেহাৎ কম নয়। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ এখন ২৪৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতার মাসিক বেতন কত জানলে আপনি অবাক হবেন।
সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেজোস জানিয়েছেন তিনি তাঁর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন থেকে বছরে মাত্র ৮০ হাজার ডলার বেতন নেন। যেটা আবার তিনি এমন অনেকগুলো যেটা আবার অনেক বছর ধরেই বাড়ানো হয়নি। শুধু তাই নয়, ১৯৯৮ সালের পর থেকে তাঁর বেজ স্যালারি (মূল বেতন) একই রয়ে গেছে।
ফলে এটা বেশ বোঝা যায় যে, বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদে বেতনের অবদান একেবারেই সামান্য। এটা অনুধাবন করার জন্য অবশ্য একটি হিসেবই যথেষ্ট। তাঁর বর্তমান ব্যক্তিগত সম্পদ (২৪৬ বিলিয়ন ডলার) শুধু বাৎসরিক বেতন দিয়ে অর্জন করতে সময় লাগবে ৩০ লাখ বছরেরও বেশি!
জেফ বেজোসের সম্পদের মূল উৎস কী?
এটা পরিষ্কার যে, অ্যামাজন থেকে প্রাপ্ত বেতন দিয়ে বেজোস বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় উঠে আসেননি। তাঁর আয়ের মূল উৎস হচ্ছে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস অ্যামাজনে থাকা তাঁর শেয়ার। অ্যামাজনের শেয়ার দর বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও। এই যেমন ২০২৩ ও ২০২৪ সালের মধ্যে সময়টায় প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৮ মিলিয়ন ডলার করে বৃদ্ধি পেয়েছে বেজোসের সম্পদ।
অ্যামাজন থেকে পাওয়া বেতন সম্পর্কে বেজোস যা বলছেন…
নিজের বেতন সম্পর্কে বেজোস দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন। অ্যামাজন থেকে এত কম বেতন উত্তোলনের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বলেছেন তিনি। তাঁর মতে, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এবং বেশ বড় অংকের শেয়ারের মালিক হিসেবে বছরে ৮০ হাজার ডলারের বেশি বেতন নেওয়াটা অনুচিত এবং তাঁর নিজের জন্য বিষয়টি অস্বস্তিকর হতো।
অ্যামাজনে তাঁর বড় অংকের শেয়ারকেই নিজের আর্থিক অনুপ্রেরণার উৎসও বলেছেন জেফ বেজোস। এই শেয়ারগুলোর কারণেই প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত বেতন নেওয়াটাকে তিনি অপ্রয়োজনীয় মনে করেছেন। উল্লেখ্য, অ্যামাজনে ১০ শতাংশেরও বেশি মালিকানা রয়েছে বেজোসের। আর এটাকেই তিনি পর্যাপ্ত প্রণোদনা মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কীভাবে আমার এর চেয়ে বেশি প্রণোদনার প্রয়োজন হতে পারে?’
উল্লেখ্য, অ্যামাজনের বেতন নির্ধারণ সম্পর্কিত কমিটিকে তাঁর বেতন না বাড়ানোর জন্য বলেছেন জেফ বেজোস নিজেই। বিষয়টি নিয়ে গর্বিত বেজোস বলেন, এর চেয়ে বেশি বেতন উত্তোলন তাঁর জন্য অস্বস্তির কারণ হতো।
২০২১ সালে অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে পদত্যাগ করার পর থেকে বেজোস অ্যামাজনের বেশ কিছু শেয়ার ইতোমধ্যেই বিক্রি করেছেন। ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ২৫ মিলিয়ন বা ২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার তিনি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
সমালোচকরা যা বলছেন…
স্বল্প বেতন নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেজোস যতই গর্ববোধ করুন না কেন, সমালোচকরা বলছেন অন্য কথা। তাঁদের দাবি, বেজোস মূলত ট্যাক্স বা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই অ্যামাজন থেকে কম বেতন নিয়েছেন। এর পেছনে অবশ্য তথ্যগত যুক্তিও পেশ করছেন সমালোচকরা। ২০২১ সালে প্রোপাবলিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের করা রিভিউ থেকে জানা যায়, ২০০৭ ও ২০১১ সালে আমেরিকা সরকারকে বেজোস কোনো ট্যাক্সই প্রদান করেননি।
আমেরিকার শীর্ষ ধনীদের কয়েক দশকের আইআরএস ডেটা বিশ্লেষণ করে রিভিউটি তৈরি করেছে প্রোপাবলিকা। আইআরএস হচ্ছে ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস, অর্থাৎ আমেরিকার আয়কর বিভাগ। আইআরএস থেকে প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেতনের চেয়ে বিনিয়োগের ক্ষতি বেশি দেখিয়ে ধনীদের অনেকেই কর ফাঁকি দিয়ে থাকেন।
বেজোসের ক্ষেত্রেও রিভিউ’তে বলা হয়েছে যে, ২০০৭ ও ২০১১ সালে বেতনের চেয়েও বিনিয়োগের বিপরীতে তাঁর ক্ষতি বেশি ছিল। তাই কোনো কর দিতে হয়নি তাঁকে। তবে শুধু বেজোসই নন, অনেকেই এই পন্থা অবলম্বন করেন কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য। এজন্য বেতন কম নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থেকে অধিক আয়ের দিকেই লক্ষ্য থাকে ধনীদের। এতে করে বিলিওনিয়ারদের জন্য কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা অনেকাংশে কমে যায়। তাই শীর্ষ ধনীদের জন্য প্রযোজ্য ট্যাক্স সম্পর্কিত আইনে যথাযথ পরিবর্তন এনে ট্যাক্স সিস্টেমে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা সমালোচকদের অনেক দিনের দাবি।
সমালোচনা সম্পর্কে বেজোসের মন্তব্য…
সমালোচকদের এমন দাবি বেজোস নাচক করে দিয়েছেন। তাঁর কথা, অ্যামাজনের শেয়ার থেকে তিনি এমনিতেই অনেক আয় করেন। এর চেয়ে বেশি প্রণোদনা তাঁর প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি অ্যামাজন থেকে অতিরিক্ত বেতন উত্তোলনকে তিনি নৈতিকভাবেও অনুচিত মনে করেন।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার্স ইনডেক্স, ইন্ডিয়া টুডে, ফরচুন,
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।