জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের নাগরিকরা আয়কর দেওয়া এবং বিভিন্ন কারণে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা টিন সনদ নিবন্ধন করে থাকেন। ন্যূনতম করযোগ্য আয়সীমার নিচে থাকলে বা টিন সনদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে টিন নম্বর বাতিল করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে।
টিন সার্টিফিকেট কি?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বারা ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত একটি অনন্য আলফানিউমেরিক কোড হল টিআইএন। এটি সেই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কর আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি অপরিহার্য সনাক্তকরণ ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে। এই কোডসহ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, তাদের কাজের ধরণ সম্বলিত নথিটিই টিন সার্টিফিকেট।
এই সনদ সরকারকে সঠিক রেকর্ড বজায় রাখতে, করদাতার সম্মতি নিরীক্ষণ করতে এবং কর সংগ্রহকে সহজতর করতে সহায়তা করে। কর্মচারী, স্ব-নিযুক্ত পেশাদার বা ব্যবসার মালিক; আপনি যেই হোন না কেন, ট্যাক্সের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য একটি টিন সনদধারী হওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টিন নম্বর থাকলেই দিতে হবে দুই হাজার টাকা আয়করটিন নম্বর থাকলেই দিতে হবে দুই হাজার টাকা আয়কর
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের পূর্বশর্ত
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি টিন নিবন্ধন বাতিলের আবেদনের জন্য ছয়টি শর্ত নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো-
১. যে করদাতাদের কর রিটার্ন দাখিলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
২. মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি বা অনুরূপ কোনো কারণে করদাতা অস্তিত্বহীন হয়ে গেলে।
৩. করদাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং বাংলাদেশে তার আয় করার মতো কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে।
৪. ডুপ্লিকেট বা একাধিক নিবন্ধন অথবা ভুল তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন পেলে।
৫. কোনো কারণে আইনি মর্যাদা পরিবর্তন হলে।
৬. অন্য কোনো আইনানুগ কারণে টিন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে।
কারা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন: করদাতার আয় আয়কর আরোপযোগ্য সীমার নিচে থাকলে টিন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরে ন্যূনতম আয়করযোগ্য আয় হচ্ছে-
সাধারণ করদাতার জন্য বছরে করযোগ্য আয় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে। মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় চার লাখ টাকার ঊর্ধ্বে।
প্রতিবন্ধী করদাতা এবং তৃতীয় লিঙ্গ করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় চার লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকার ঊর্ধ্বে। গেজেট-ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার বেলায় বছরে করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে।
অনেক সময়ই কারও এই পরিমাণের কম বাৎসরিক আয় থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সার্টিফিকেটটির প্রয়োজন না হলে সেটি বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও কারও পূর্ববর্তী আয় অনুযায়ী কর দেওয়ার প্রয়োজন থাকায় তিনি টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে আয় কমে কর সীমার বাইরে চলে আসায় আর টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নাও হতে পারে। এসময় টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে পারেন।
এছাড়া কোনো করদাতা ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার টিন সার্টিফিকেটটির আর প্রয়োজন থাকে না। তাই তার টিন সার্টিফিকেটটিও বাতিল করা যেতে পারে। পিতার মৃত্যুর পর টিআইএন বাতিল করার দায়িত্ব বর্তায় তার উত্তরাধিকারীদের উপর। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বাবার এমন কোনো ব্যবসা আছে কি-না যার টিআইএন বাতিল করলে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বাতিল করে নতুন করে করতে হয়। এ ধরনের বড় জটিলতা তৈরি হলে, উত্তরাধিকারগণ মৃত বাবার টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন না।
কোনো বাংলাদেশি যদি কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকেন এবং তার যদি বাংলাদেশে করযোগ্য কোনো আয় না থাকে তাহলে তিনি বাংলাদেশে কর দিতে বাধ্য নন। সেক্ষেত্রে তার বাংলাদেশে থাকাকালীন নিবন্ধিত টিআইএন সনদ বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
একজন ব্যক্তি মাত্র একবারই টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। কোনোভাবেই একাধিক টিআইএন করা যাবে না। নিবন্ধনকারী বা কর কর্মকর্তা কর্তৃক ভুলের কারণে নিবন্ধিত টিনটির তথ্য ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য টিন বাতিলের দরকার পড়ে।
অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করবেন যেভাবেঅনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করবেন যেভাবে
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
– আবেদনকারীর বর্তমান টিন সার্টিফিকেটের একটি প্রিন্ট কপি
– জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার একটি ফটোকপি
– পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ-বছরের শূন্য কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ফটোকপি
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন পদ্ধতি: টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল: যেহেতু পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ বছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেখাতে হবে, তাই আপনাকে আগামী তিন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। অতঃপর টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করে যাবেন। প্রতি কর রিটার্ন দাখিলের পর একটি কর রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেওয়া হবে। এগুলো পরবর্তীতে সংযুক্তির জন্য সংরক্ষণ করে রাখবেন।
কর সার্কেল অফিসে আবেদন: তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়েই সম্পন্ন করতে হবে আবেদনের কাজটি। এ সময় বিগত দুই বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দুটি সঙ্গে নিয়ে আপনার কর সার্কেলের অফিসে চলে যাবেন। অতঃপর সেখানকার উপ-কর কমিশনার বরাবর একটি আবেদনপত্র লিখবেন। এখানে টিন সনদ বাতিলের জন্য যাবতীয় কারণ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন। লেখা শেষ হলে বিগত তিন বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সংযুক্ত করে আবেদনপত্র জমা দিয়ে দিবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, আয়কর অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য টিন সনদের মালিকের যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তিনি যেতে অপারগ হলে, তার পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে যে কেউই আয়কর অফিসে উপস্থিত হয়ে দরখাস্ত জমা দিতে পারবেন।
ই-টিনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ট্যাক্স রিটার্ন সার্টিফিকেটই-টিনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ট্যাক্স রিটার্ন সার্টিফিকেট
টিন সার্টিফিকেট বাতিলে প্রয়োজনীয় খরচ
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদনের সমুদয় পদ্ধতিতে সরকার ঘোষিত কোনো রকম খরচ নেই। অর্থাৎ করদাতাগণ বিনামূল্যেই তাদের টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন পরবর্তী কার্যক্রম: আবেদন জমা হওয়ার পর আপনার কর সার্কেলের উপ-কর কমিশনের কর্মকর্তারা আপনার আয়কর ফাইলটি নথিভুক্ত করবেন। এ সময় আবেদনে উল্লেখিত কারণসমূহ ভালোভাবে যাচাই করে দেখা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার টিন সার্টিফিকেটটি চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এরপর নতুন করে টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন।
শেষাংশ: বাংলাদেশের নাগরিকরা যেমন প্রয়োজনে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা টিন নিবন্ধন করতে পারেন তেমনি এই সনদ বাতিল করতে পারবেন। টিন সনদ বাতিলের আবেদনের শর্তাবলি খেয়াল রেখে সহজেই আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। উপরোক্ত আলোচনায় টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে সে ব্যাপারে একটা স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।