বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : এক কাজ করতে গিয়ে আরেক জিনিস আবিষ্কার করে ফেলার ঘটনা কিন্তু ইতিহাসে কম নয়। আমরা আগেও এ নিয়ে অনেক লিখেছি। আরেকটা লিখতে তো দোষ নেই! ধরা যাক, ওভেনের কথা। রান্নার জন্য একটা বৈদ্যুতিক এবং নিরাপদ পাত্র চাই—এভাবে ভেবে কিন্তু স্পেনসার ওভেন আবিষ্কার করেননি।
এই আবিষ্কারটা হয়েছিল কাকতালীয়ভাবে। তিনি আসলে কাজ করছিলেন রাডার নিয়ে। মূল গল্পটা একটু শুনে ফেলতে পারি।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে।
সেই সঙ্গে চলছে বিমান হামলার প্রতিযোগিতা। বিমানের সাহায্যে সহজেই শত্রু দেশে হামলা চালিয়ে দ্রুত ফিরে আসা যায়। কিন্তু শত্রুও তো বসে থাকবে না। হামলা ঠেকানোর উপায় নিশ্চয়ই বের করতে হবে।
আর উপায় হিসেবে আগেই এসেছে রাডার নামের একটা যন্ত্র, যার সাহায্যে বহুদূর থেকেই বিমানের গতিবিধি শনাক্ত করা সম্ভব। আর আগেভাগে যদি শনাক্ত করা যায়। খুব সহজেই পাল্টা হামলা চালিয়ে শত্রু বিমানকে ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব।
কিন্তু প্রতিটা প্রযুক্তিরই পাল্টা প্রযুক্তি চলে আসে। সুতরাং একসময় রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে এমন বিমান বাজারে আসে।
এ নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মিত্র শক্তি। তখন একধরনের টিউব তৈরি করেছিলেন গবেষকেরা। সেটার নাম ম্যাগনোট্রন। বিশেষ এই টিউটব মাইক্রোওয়েভ বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি করতে পারত। সুতরাং গবেষকেরা রাডারে এই বিশেষ ম্যাগনোট্রন বসাতে শুরু করলেন। এর সাহয্যে সহজেই শত্রু বিমান শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল।
ব্রিটিশ টেকনিশিয়ান লিব্যারন স্পেনসার ১৯ বছর বয়সে ব্রিটিশ নেভিতে যোগ দেন। তবে সাধারণ সৈনিক হিসেবে নয়, তাঁর উৎসাহ ছিল বেতার যোগাযোগে। ধীরে ধীরে তিনি পরিণত হন রাডার বিশেষজ্ঞে। যুদ্ধ চলাকালে একদিন রাডারে ম্যাগনোট্রন সংযুক্ত করছিলেন। এ জন্য ম্যাগনোট্রনের খুব কাছে চলে আসেন। তখন তাঁর পকেটে ছিল একটা ক্যান্ডিবার। স্পেনসার লক্ষ করেন পকেটের ভেতর সেই ক্যান্ডিবারটি গলে গেছে।
কেন এমন হলো?
ভাবতে লাগলেন স্পেনসার। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের শক্তি সম্পর্কে তাঁর অজানা ছিল না। ধারণা করলেন, ম্যাগনোট্রনের মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের কারণেই বোধ হয় এমনটা হয়েছে। সুতরাং ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে পরীক্ষা করার কথা ভাবেন তিনি।
হাতের কাছে ছিল কিছু ভুট্টার দানা। সেগুলো ম্যাগনোট্রনের খুব কাছে রেখে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুট্টা দানা গরম হয়ে ফেটে যায়, পরিণত হয় পপকর্নে।
ব্যাপারটা দেখে বেশ মজা পান স্পেনসার। এবার তিনি ডিম সিদ্ধ করার কথা ভাবেন। এ জন্য একটা কেটলিতে ডিম রাখেন। কিন্তু কেটলির দেয়াল যদি ভেদ করে ঢুকতে না পারে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ?
তাই কেটলিতে একটা বড়সড় ফুঁটো করেন। তারপর ডিমসহ কেটলিটা রাখেন চলন্ত ম্যাগনেট্রনের পাশে। শিগগিরই খেয়াল করেন কেটলির পানি গরম হয়ে গেছে, আর ডিমও সিদ্ধ হচ্ছে নিশ্চয়ই। সেটা এতটাই সিদ্ধ হয়, দুম করে বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। স্পেনসারের এক সহকর্মীও সামান্য আহত হন।
স্পেনসার পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেন। বুঝতে পারেন আগামীতে রান্নার জগতে বিপ্লব ঘটানোর মতো একটা যন্ত্র তৈরির আইডিয়া তিনি পেয়ে গেছেন। তবে অবশ্যই সাবধানতা ও নিরাপত্তার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে।
পরে একটা ধাতব বাক্সের ভেতর ম্যাগনোট্রন বসিয়ে তৈরি করে ফেলেন পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোওয়েভ ওভেন। ধাতব বাক্স দেওয়ার কারণ, মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ এই বাক্সের দেয়াল ভেদ করতে পারে না। সুতরাং নিরাপত্তার ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়ে যায়।
সূত্র : ব্রিটানিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।