ধর্ম ডেস্ক : রমজান হিজরি বর্ষের নবম মাস। রমজান সিয়াম সাধনার মাস। রমজান তাকওয়ার মাস। রমজান কোরআন নাজিলের মাস। পবিত্র রমজান মাসে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা কোরআনে কারিম নাজিল হয়েছে।
তাই রমজান মাসের সঙ্গে কুরআনে কারিমের একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, রমজান মাস-যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায়, (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে।
এজন্য যতদূর সম্ভব, এই মাসে রোজা রাখার সাথে সাথে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। ইমামে আজম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজানের দিনগুলোতে দৈনিক দুই খতম করে এক রমজান মাসেই ৬০ খতম কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
আমাদের নিকট অতীতে আল্লামা ইবনে আবেদিন শামি রহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবনীতে পাওয়া যায়, রমজান মাসে দৈনিক তিনি এক খতম কোরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত ছিলেন।
যদিও দৈনিক এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করা জরুরি নয়, কিন্তু আমাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু পারি ততটুকু অন্তত চেষ্টা করা উচিত।
তাই যারা চলতি রমজানে কোরআন খতম কিংবা কোরআন তেলাওয়াত করতে চান, তারা প্রতিদিন কিভাবে আর কতটুকু করে পড়লে এ মাসে কোরআন পাঠ শেষ করতে পারবেন, সে বিষয়ে একটি সুন্দর কৌশল ও পরামর্শ হলো—
১. প্রতিদিন ৪ পৃষ্ঠা করে প্রত্যেক নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করা। প্রত্যেক ৫ ওয়াক্ত নামাজের পরে ৪ পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করার ফলে দৈনিক তেলাওয়াত হবে ২০ পৃষ্ঠা অর্থাৎ এক পারা। এতে খুব বেশি সময় খরচ হবে না। এভাবে দিনে এক পারা করে তেলাওয়াত করলে পুরো রমজানে ৩০ পারা, খুব সহজেই ১ খতম হয়ে যাবে।
২. রমজান মাসে কোরআন শরীফ দুইবার খতম করার পদ্ধতি হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ৮ পৃষ্ঠা করে পড়লে দৈনিক দুই পাড়া কোরআন পড়া হবে, এভাবে পড়লে রমজান মাসে কোরআন শরীফ দুইবার খতম দেওয়া সম্ভব।
৩. অনুরুপ ভাবে রমজান মাসে কোরআন শরীফ তিন বার খতম করাও সম্ভব, দৈনিক ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় বের করবে শুধু কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করার জন্য, প্রতি ৩০ মিনিটে একপারা কোরআন তেলাওয়াত করবে, (দিনের যে কোন সময়) এভাবে দেড় ঘন্টায় তিন পারা কোরআন পড়া হয়ে যাবে।
৪. কেউ চাইলে রমজান মাসের প্রতি সপ্তাহে এক খতম করে, পুরো রমজান মাসে চার খতম কোরআনও পড়তে পারে।
৭ দিনে কোরআন খতম করার আরেকটি পদ্ধতি হলো, আমাদের পূর্বসূরীগন যেভাবে আমল করেছেন, তারা কোরআনকে সাতটি ভাগে বিভক্ত করে, সাত দিনে তিলাওয়াত করতেন। তারা প্রথম দিন শুরু করতেন কোরানের প্রথম তিনটি সূরার মাধ্যমে, তারপর পরবর্তী পাঁচটি সুরা, তারপর সাতটি সুরা, তারপর নয়টি সুরা, তারপর এগারোটি সুরা, তারপর তেরোটি সুরা, তারপর সুরা ক্বফ্ থেকে সুরা নাস পর্যন্ত।
এছাড়াও প্রতি নামাজের সময় ২০ পৃষ্ঠা করে কোরআন পড়লে ৩০ দিনে ৫ খতম হবে।
কোরআন শরিফ না বুঝে পড়লে প্রতি হরফে কমপক্ষে ১০ নেকি হয়। বুঝে পড়লে আরও বেশি নেকি হয়। এছাড়াও রমজান উপলক্ষে নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। নিষ্ঠা ও ভালোবাসার কারণে আল্লাহ তাআলা ৭০০ থেকে অগণিত গুণ কিংবা বেহিসাব বৃদ্ধি করে থাকেন।
ইমামে আজম আবু হানিফা নোমান রহ. রমজানের দিনে ১ রাতে ১ খতম হিসাবে একমাসে মোট ৬০ খতম করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জেলখানায় ৮০ তম খতমের সময় কোরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় সেখানেই শাহাদত বরণ করেন।
আসুন, আমরা হাফেজ আলেমগণের মতো পাঁচ-দশ বা দুই-চার খতম কিংবা কমপক্ষে ১টি খতম হলেও করার নিয়ত করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।