লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্বর্ণের দাম এখন আকাশছোঁয়া। সেই যুগ যুগ ধরে স্বর্ণের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণ চলে আসছে। দাম যতই বাড়ুর না কেন স্বর্ণ কেনার কমতি হয় না। উচ্চ বিত্ত হোক বা মধ্যবিত্ত স্বর্ণ সকলের কাছেই দারুণ প্রিয়। শুধু গয়না হিসেবেই নয়, সম্পদ হিসেবেও স্বর্ণের চাহিদা সদাই তুঙ্গে। স্বর্ণ হল সবচেয়ে মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে একটি। বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগৎ তৈরির বহু আগে সুপারনোভা ও নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর যাবতীয় স্বর্ণের সৃষ্টি হয়েছে।
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মানুষ স্বর্ণ তুলে আনেনি, বরং বিভিন্ন সময় বিশেষ করে পৃথিবীর বয়স যখন কম, তখন এর সঙ্গে বিভিন্ন গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন কারণে, ভূমিকম্প কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ভূ-অভ্যন্তর থেকে অনেক স্বর্ণ মানুষের হাতের নাগালের দূরত্বে এসে পৌঁছেছে, যা এখন খনিতে গর্ত করে উত্তোলন করা হয়।
স্বর্ণ ধাতুটি বেশ দুর্লভ। এটি নমনীয় একটি ধাতু। এটি অন্যান্য ধাতুর চেয়ে কম সক্রিয়, অর্থাৎ ওয়ান অব দ্য লিস্ট রিয়্যাক্টিভ কেমিক্যাল এলিমেন্টস। এটি প্রায় সব এসিডেই রেসিস্ট্যান্ট। আর এ কারণেই অন্যান্য সাধারণ ধাতুর মতো সোনা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি বেশ ভালো ইলেকট্রিক কন্ডাক্টর। এক কথায় স্বর্ণের সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও ক্ষয়হীন বৈশিষ্ট্য একে অন্য সব ধাতুর থেকে অনন্য করেছে। আর এসব কারণেই এটি সবার কাছে খুব মূল্যবান।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ২ লাখ টন স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে, যা প্রায় ৪টি অলিম্পিক সাইজ সুইমিংপুলের সমান। ভাবছেন, এই বুঝি স্বর্ণের মজুত শেষ হয়ে গেল? আসলে তা না। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরের ১ কিলোমিটারের মধ্যে আরও ১ লাখ টন সোনা আছে।
বর্তমানে স্বর্ণ বিভিন্ন রং এবং শৈলীতে সোনা পাওয়া যায়। অভিজ্ঞরা সাধারণও চোখে দেখেই স্বর্ণ চিনতে পারেন। কষ্ঠি পাথরে সোনা ঘষে স্বর্ণের সত্যতা যাচাই করেন স্বর্ণকাররা। কিন্তু কষ্ঠিপাথর তো সবার কাছে থাকে না। আর অভিজ্ঞতাও একদিনে তৈরি হয় না। তাই আপনার নিজের কাছের স্বর্ণগুলো খাঁটি কিনা তা জানতে গেলে কয়েকটি কৌশল জানা থাকলেই হবে। খাঁটি স্বর্ণ, স্বর্ণের জল করা ধাতু কিংবা স্বর্ণের পাত মোড়ানো ধাতু চেনা যায় এই কৌশলেই। স্বর্ণ প্রধানত ক্যারেটে মাপা হয়। এর বিশুদ্ধতা নির্ভর করে স্বর্ণ 10k, 14k, 18k, 22k বা 24k হতে পারে। স্বর্ণ খাঁটি কিনা তা বাড়িতেই পরীক্ষা করুন এই সহজ উপায়গুলো মেনে
হলমার্ক দেখে নিন
খাঁটি সোনা চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল হলমার্ক। যে সোনার গয়না, কয়েন বা বাট আপনি কিনছেন সেটি খাঁটি কিনা বোঝার জন্য হলমার্ক চিহ্ন দেখে নিন। বেশিরভাগ সময়েই হলমার্ক চিহ্ন গয়নার ভিতরের দিকে দেওয়া থাকে। সাধারণত ক্যারট অনুযায়ী ২৪, ২২, ১৮, ১৪ বা ১০ এই নম্বরগুলি লেখা থাকে। নম্বর যত বেশির দিকে থাকবে বুঝতে হবে সোনার গুণগত মান তত ভালো। সাধারণত ২২ বা ২৪ ক্যারেটের সোনাই কেনা উচিত।
পানি দিয়ে পরীক্ষা
একটি বড় গামলায় দুই গ্লাস পানি নিন। তাতে কিনে আনা সোনার গয়না ফেলে দেখুন সেটা ভাসছে কিনা। যদি ভাসে তা হলে বুঝতে হবে সেটা নকল। খাঁটি সোনা পানিতে তাড়াতাড়ি ডুবে যায়।
চুম্বক পরীক্ষা
স্বর্ণ খাঁটি নাকি অন্য কোনো ধাতু মেশানো আছে সেটা জানার আরও একটা সহজ পদ্ধতি হল চুম্বকের সাহায্যে পরীক্ষা করা। এবার আপনার কেনা স্বর্ণের গহনা চুম্বকের কাছাকাছি নিয়ে যান। যদি দেখেন যে সোনা চুম্বকের সঙ্গে আটকে যাচ্ছে না তাহলে বুঝবেন যে স্বর্ণ খাঁটি। কারণ চুম্বক সোনাকে আকৃষ্ট করে না।
চিনামাটির প্লেট
একটি চিনামাটি বা সেরামিকের প্লেট নিন। এবার তার ওপর দিয়ে স্বর্ণের বাট, কয়েন বা গয়না যেটাই কিনে থাকুন, সেটি আস্তে আস্তে ঘষুন। যদি দেখেন প্লেটের ওপর কালচে দাগ পড়ছে তাহলে বুঝবেন যে স্বর্ণ কিনেছেন সেটি আসল নয়।
অ্যাসিড টেস্ট
আসল স্বর্ণ নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। এটি অবশ্য তামা, দস্তা, স্টার্লিং সিলভার ইত্যাদির মতো অন্যান্য মিশ্রণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। অল্প পরিমাণ নাইট্রিক অ্যাসিড ড্রপারের সাহায্যে গহনার ওপর ফেলুন। যেখানে অ্যাসিড পড়ল সেই জায়গাটি সবুজ হয়ে গেলে বুঝবেন সেটি আসল স্বর্ণ নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।