লাইফস্টাইল ডেস্ক : বাংলাদেশে ছাগল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণি। ফি বছরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে আমাদের দেশ গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে জানা যায়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, এত গরু-ছাগল আসে কোথা থেকে?
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠকদের জানিয়ে রাখা ভালো। চুপিচুপি বলছি। শুনুন, এ দেশের মনুষ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে গরু-ছাগল অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে অনেক দিন হলো! আর এভাবেই দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা কেবল বাড়ছেই।
আজকের লেখায় অবশ্য আমরা গো-জগতে ঢুকব না। বরং বিচরণ করব ছাগলের দুনিয়ায়। লক্ষ্য করলেই অনুভব করতে পারবেন যে, আপনার চারপাশে নানা প্রজাতির ছাগল আছে। হ্যাঁ, যার চার পা আছে এবং আক্ষরিক অর্থেই ‘ম্যাঁ ম্যাঁ’ করে ডাক দেয়–সেগুলো চেনা সহজ। সেগুলো জন্মসূত্রে ছাগলই। কিন্তু এমন অনেক প্রাণি আপনাদের চারপাশে ঘোরে যাদের দুটি পা এবং ওই অর্থে লেজ দৃশ্যমান থাকে না। তবে দুটি চোখ ও একটি মুখ কিন্তু মেলে। এরা সব সময় ‘ম্যাঁ ম্যাঁ’ করে ডাক না দেওয়ায় এক ধরনের বিভ্রমেরও জন্ম হয়। ফলে বোঝা যায় না এদের আসল পরিচয়। কিন্তু এরাও আসলে ছাগলই, তবে কর্ম ও আচরণসূত্র অনুযায়ী।
তবে এদের সত্যিকারের পরিচয় জানতে কিছু বিশেষ মুহূর্তই যথেষ্ট। সেইসব মুহূর্তেই আপনি জেনে যাবেন মনুষ্যরূপী ছাগলদের। আর এসব ছাগলের কিছু কিছুদের পরিচয় হিসেবে আপনার মুখ থেকেই বের হয়ে যাবে–‘ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা!’
এবারের আলোচনায় আমরা সেই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাদেরই চেনার উপায় জেনে নেব। জানতে পারলেই কিন্তু ঠিকঠাক বুঝতে পারবেন। আর কথায় তো আছেই, বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা।
আগে চলুন, বুঝে নেওয়া যাক, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা বলতে আদতে কী বোঝায়। দেখুন, সব কিছুই এখন গুগলে পাওয়া যায়। গুগল এমন এক সর্বজ্ঞানী মামা, যার কোটি কোটি ভাগ্নে-ভাগ্নি। তো তেমনই একজন হয়ে জিজ্ঞেস করে ফেলবেন গুগলকে। যাদের তাতেও আলসি, তাদের জন্য অবশ্য একটি ব্যাখ্যা দেওয়াই যায়। পাঠকদের সেবার নিমিত্তেই তো এই লেখা।
মোটামুটি যা জানা গেছে, তা হলো–ছাগলের একাধিক বাচ্চা প্রায় একসাথে হয়। মানে একটি ছাগলপালন বিষয়ক বিশেষায়িত নির্দেশিকা পড়ে জানা গেল, বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে ছাগী একবারে ১০-১৫ মিনিট অন্তর অন্তর একাধিক বাচ্চা প্রসব করতে পারে। এটা কিন্তু গুল না। সত্যিই দুটি বাচ্চা তো হয়ই, তার বেশিও হয়। আর দুইয়ের বেশি হলেই নাকি সমস্যা। কারণ ছাগী একসাথে দুটি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারে। কিন্তু দুইয়ের বেশি হলে অন্য বাচ্চাদের লাইনে দাঁড়াতে হয়। আর লাইন লাগলেই যে বাচ্চা উত্তেজনায় (!) তিড়িংবিড়িং শুরু করে দেয়, সেটিই হলো ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।
এক্ষেত্রে অবশ্য গুগল বিশেষজ্ঞদের দুই ধরনের মত আছে। কেউ মনে করেন, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা বলতে বঞ্চিতদের তিড়িংবিড়িংকে হাইলাইট করা উচিত। আবার অন্য পক্ষের মতে, দুধ না খেয়েই হুদাই আহ্লাদে বা উত্তেজনায় লাফালাফি করা দিয়েই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাকে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। এতেই নাকি এই বিশেষণের সত্যিকারের প্রয়োগ হয়।
যাই হোক, এখন আশা করি মনুষ্যরূপী ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা আসলে কারা, তা কিছুটা বোঝা গেছে। এবার তাদের চিনে নেওয়ার কিছু লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
১ম লক্ষণ: স্বাভাবিকভাবেই এরা তিড়িংবিড়িং করে, হুদাই লাফায়। অতিরিক্ত লাফানো বা উত্তেজিত কাউকে দেখলে শুরুতেই কার্যকারণ খোঁজার চেষ্টা করুন। কেন সে লাফাচ্ছে? কেন তিড়িংবিড়িং করছে? কেন সব কথায় নিজের বামসহ সব হাত-পা ঢুকিয়ে দিচ্ছে? কোনো দূরতম কারণও না পেলে বুঝে নেবেন, আপনি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার দেখা পেয়ে গেছেন।
২য় লক্ষণ: আপনি না চাইলেও, সকল বিষয়ে যারা আপনাকে অযাচিত ‘জ্ঞান’ দান করতে থাকে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক হোন। তাদের দেওয়া কিছু ‘জ্ঞান’ ক্রসচেক করে দেখুন। ঝামেলা পাচ্ছেন কি? না পেলে বুঝবেন ওদের মাথায় সমস্যা। আর যদি পেয়ে যান, তাহলে এবার ১ম লক্ষণটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। নিশ্চিতভাবেই পেয়ে যাবেন। তখনই বুঝে যাবেন, আপনি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার দেখা পেয়ে গেছেন।
৩য় লক্ষণ: বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘যার বিয়া তার হুঁশ নাই, পাড়া-পড়শির ঘুম নাই’। এমন ‘পাড়া-পড়শি’ টাইপের লোকজন আমাদের দেশে অনেক আছে। এরা অবচেতন মনে বিশ্বাস করে যে, এরা ‘হনু’। তো এমন লোকজন সামনে পেলেই ১ম ও
২য় লক্ষণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। আশা করি, পেয়ে যাবেন ভালো পরিমাণে। আর তখনই বুঝে যাবেন…!
ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা চিনতে এই তিন লক্ষণই যথেষ্ট। অন্যকে চেনার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ওপরও প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। দেখা গেল, চমকেই গেলেন একেবারে!
এখন প্রশ্ন করতেই পারেন যে, চেনা তো হলো, কিন্তু সামলাবো কীভাবে?
সামলানোর বিস্তারিত উপায় পরে জানানো হবে। সব কিছু তো আর এক লেখায় জানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে একটি ছোটখাটো টোটকা দিয়ে রাখা যায়। সেটি এক ধরনের সতর্কতাও বটে।
এক্ষেত্রে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, বৈজ্ঞানিকভাবে ছাগলপালন বিষয়ক বিশেষায়িত নির্দেশিকা অনুযায়ী, আমাদের দেশে মূলত দুটো পদ্ধতিতে ছাগলের বাচ্চা পালন করা হয়। এগুলো হলো–১. প্রাকৃতিক ও ২. কৃত্রিম পদ্ধতি। এ দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। বোঝেনই তো, প্রাণ ও প্রকৃতির মধ্যেই তো আমাদের বাস।
এক সাথে দুই দম্পতির বসবাস, কোন সন্তানের বাবা কে কেউ জানেন না
এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সাধারণত ছাগলের বাচ্চা নিজের পরিবারের সদস্যদেরই সাথে ঘোরাফেরা করে। সুতরাং, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাকে চিনতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই সচকিত হোন। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টিপাত করুন। খুঁজতে শুরু করে দিন ছাগলের গুষ্ঠি। কারণ,
তিন নম্বর বাচ্চা যেহেতু পেয়েছেন, সেহেতু অবশ্যই আশেপাশেই আছে ছাগলের পাল। পুরো পাল ও পালের গোদাদের তাই চিনে রাখতেই হবে।
আর চেনার পর স্রেফ তাদের হাত, পা ও মাথা থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। প্রয়োজনে ফিতা দিয়ে মেপে ১০০ হাত দূরত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত করুন। নইলে কিন্তু পাপ করবেন একবার, কাঁদতে হবে বার বার!
সবশেষে সবার প্রতি শুভ কামনা রইল। জানুন, চিনুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।