নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে হুয়াওয়ের ফোল্ডেবল ল্যাপটপ : নতুন যুগের সূচনা?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তিবিশ্বে পশ্চিমা জায়ান্টদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চীন বরাবরই একাধিক ধাপে এগিয়ে রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় হুয়াওয়ে বাজারে নিয়ে এসেছে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে চালিত একটি ফোল্ডেবল ল্যাপটপ—Huawei MateBook Fold Ultimate। অত্যাধুনিক ডিজাইন, পাতলা কাঠামো এবং HarmonyOS 5 ব্যবহারের কারণে এটি এখন প্রযুক্তিপ্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রে।

মাইলফলক গড়েছে প্রি-অর্ডারে

উন্মোচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই এই ল্যাপটপের দুইটি মডেল ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি প্রি-অর্ডার পেয়েছে। চীনের বাজারে এটি প্রযুক্তিগত সাফল্যের নতুন একটি ধাপ। তবে এখন পর্যন্ত কেবল চীনের বাজারেই উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম প্রায় ৪ লাখ টাকার বেশি।

সবচেয়ে পাতলা ফোল্ডেবল ল্যাপটপ?

হুয়াওয়ের দাবি অনুযায়ী, এটি বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ফোল্ডেবল ল্যাপটপ। ভাঁজ খোলা অবস্থায় এর পুরুত্ব মাত্র ৭.৩ মিমি এবং ভাঁজ অবস্থায় ১৪.৯ মিমি। পূর্ববর্তী পাতলা ফোল্ডেবল ল্যাপটপ লেনোভোর ThinkPad X1 Fold-এর তুলনায় এটি আরও হালকা এবং পাতলা।

HarmonyOS 5: উইন্ডোজের চীনা বিকল্প

Huawei MateBook Fold Ultimate-এ রয়েছে হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম HarmonyOS 5। এটি Windows-এর বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর। নিজস্ব OS এবং চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে হুয়াওয়ে চীনের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা প্রতিষ্ঠা করছে। শুধু হার্ডওয়্যার নয়, সফটওয়্যার খাতেও এখন চীন নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছে।

চীনা প্রযুক্তির নতুন বার্তা

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, হারমোনি ওএস চালিত এই ডিভাইসগুলো দেশীয় প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নাগরিকদের মাঝেও আলোচনায় এসেছে যে, চীন এখন সফটওয়্যার থেকে হার্ডওয়্যার—সবকিছুতেই স্বনির্ভর।

আন্তর্জাতিক বাজারে সম্ভাবনা

যদিও এখন পর্যন্ত এই ল্যাপটপ শুধু চীনে প্রি-অর্ডারের জন্য উন্মুক্ত, তবে বিশ্লেষকদের মতে এটি আন্তর্জাতিক বাজারেও হুয়াওয়ের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। হুয়াওয়ের HarmonyOS চালিত ডিভাইস আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিবাজারে মার্কিন বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিতে পারে।

চিপ উৎপাদনে বিপ্লব

চীন বর্তমানে নিজস্ব চিপ উৎপাদনে নজর দিচ্ছে। ২০২৩ সালে ‘Big Fund 2.0’-এর মাধ্যমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশীয় চিপ নির্মাতা SMIC-এ সরকার বিশাল বিনিয়োগ করছে, যা চীনের স্বনির্ভর প্রযুক্তির বার্তা বহন করছে।

মার্কিন প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে হুয়াওয়ে

হারমোনি ওএস এখন অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজের বিকল্প হিসেবে অনেক সরকারি ও সামরিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে অ্যাপল, উইন্ডোজ এবং ইন্টেলভিত্তিক কম্পিউটার ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হুয়াওয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে, যেখানে মার্কিন প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম।

কোন রঙের কাপড় পড়লে মশা বেশি আকৃষ্ট হয়

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

Huawei MateBook Fold Ultimate কেবল একটি ল্যাপটপ নয়; এটি একটি বার্তা—চীন এখন নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে শক্ত অবস্থান নিতে চায়। এটি শুধু চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে একটি নতুন প্রতিযোগিতার সূচনাও।