বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনের টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে ২০১৯ সাল থেকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরই সঙ্গে মহামারী-পরবর্তী সরবরাহ সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে স্মার্টফোনের বাজারে প্রতিষ্ঠানটির প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী ছিল। তবে ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজারে শক্তিশালীভাবে প্রত্যাবর্তন করে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে হুয়াওয়ে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে হুয়াওয়ে চীনে ১ কোটি ১৭ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
এদিকে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল চীনের বাজারে বিক্রি ২৫ শতাংশ কমে প্রায় ১ কোটি ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। বিক্রির দিক থেকে চীনের বাজারে অ্যাপল পঞ্চম স্থানে নেমেছে। এছাড়া চীনের স্থানীয় অপো ও ভিভোর ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের বিক্রিও যথাক্রমে ১৪ ও ৯ শতাংশ কমেছে। তবে হুয়াওয়ের সাবেক বাজেট ব্র্যান্ড অনার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন বাজার, যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের শীর্ষ ছয়টি স্মার্টফোন কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ ছিল খুবই কাছাকাছি। ক্যানালিসের বিশ্লেষক রুনার বিজোরহোভডে মতে, প্রথম প্রান্তিকে চীনের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ ইউনিট বিক্রির পার্থক্য ছিল। তিনি আশা করছেন আগামী প্রান্তিকগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাবে।
গত বছরের আগস্টে হুয়াওয়ে মেট সিক্সটি প্রো ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের অবাক করেছিল। কারণ এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরও হুয়াওয়ের নিজস্ব চিপনির্ভর তৈরি করা প্রথম ফাইভজি ডিভাইস ছিল। মূলত হুয়াওয়ে বিরুদ্ধে চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে হুয়াওয়ে সে অভিযোগ অস্বীকার করে। চলতি মাসে হুয়াওয়ে তাদের সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ লাইনআপ পুরা সেভেনটি উন্মোচন করেছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, চীনের বাজারে হুয়াওয়ের শীর্ষে স্থানে ফিরে আসা তাদের স্মার্টফোনে ব্যবসায় শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র রফতানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি চীনে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। তার প্রভাবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়। গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে না পারায় হুয়াওয়েকেও তখন নিজস্ব হারমোনিওএস অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে হয়েছিল।
সর্বশেষ প্রান্তিকে চীনের বাজারে অ্যাপলের বিক্রি কমে আসা তার ব্যবসার জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিশারদরা। সম্প্রতি অ্যাপলের সিইও সাংহাইতে একটি ফ্ল্যাগশিপ স্টোর খোলার জন্য চীন সফর করেছিলেন। সেখানে তিনি অ্যাপলের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সম্প্রসারণের ঘোষণার পর অ্যাপলের কাছে চীনের বাজারে গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ক্যানালিসের বিশ্লেষক রুনার বিজোরহোভডে বলেন, ‘হারমোনিওএসের সাফল্য আগামীতে হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের পারফরম্যান্সের মূল চাবিকাঠি হবে। ডেভেলপারদের আকৃষ্ট করতে পর্যাপ্ত ইনস্টল বেস তৈরি করতে হবে হুয়াওয়েকে। এখন বিশ্বজুড়ে ৮০ কোটিরও বেশি হারমোনিওএস ইনস্টলেশন হয়েছে। হারমোনিওএসকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারলে সময়ের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোন ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারণ করতে পারবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।