সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি পরিবারকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে।
রবিবার (২৮ জুলাই) মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব চত্ত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী আয়েশা আক্তার নামের এক নারী জানান, গত মঙ্গলবার হরিরামপুরের ইজদিয়া যাত্রাপুর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম বিশ্বাস (১৬) মোটরসাইকেলযোগে লেছড়াগঞ্জ বাজারে যাওয়ার সময় লাউতা মোড়ের পূর্ব পাশে পৌছাইলে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির আরেকটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আশরাফুল। এরপর বৃহস্পতিবার বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের চালক শ্রীদাস রাজবংশীর (২৮) বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আশরাফুলের মামা আজিজুল বেপারী। এতে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখায় এবং অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে চুরির মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখান তিনি।
মীর মালেক নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি উপজেলার বাহিরচর এলাকায় নিজের মুদি দোকানে বসে থাকাবস্থায় দেওয়ান সাইদুরের হুকুমে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন চারটি মোটরসাইকেল যোগে তার দোকানে এসে তাকে দোকানের ভিতরে এবং তার ছেলে চঞ্চল মীরকে দোকানের সামনে পেয়ে তাদেরকে জোড়পূর্বক টানাহিচড়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে উপজেলা পরিষদের ভিতরে দেওয়ান সাইদুরের অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। এসময় দেওয়ান সাইদুর ও তার সহযোগীরা মীর মালেক ও তার ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। গালিগালাজ করতে বারণ করলে সকলে মিলে মীর চঞ্চলকে মারধর করে। এরপর তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়। এঘটনার পর মীর মালেক বাদি হয়ে হরিরামপুর থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, একজনের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ছেলেটি বেপরোয়া গতিতে চালানোর সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে একটি ছেলে মারা যায়। এঘটনায় তার পরিবার থানায় অভিযোগ করে। এরপর ওসি সাহেব আমাকে বললো, সব পক্ষকে ডেকে একটা মীমাংসা করে দেন। আমি সবাইকে ডেকে মীমাংসার কথা বলেছি। তাদের কারো সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই। আমি কেন একজনের পক্ষ নেব? সব পক্ষই তো আমার লোক। আর মীর মালেক একজন অসভ্য লোক, এলাকায় সবার সাথে ঝগড়া করে। তার এলাকার লোকজন তাকে মারধর করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিল। পরে আমি তাদেরকে বলেছি তোমাদের কিছু করার দরকার নেই। আমিতাকে ডেকে শাসন করে দিব। মীর মালেককে ডেকে শুধু বলেছি কারো সাথে ঝগড়া কইরোনা, সবার সাথে মিলেমিশে থাকো। এটুকু শাসন যদি করতে না পারি তাহলে চেয়ারম্যানগিরি করবো কিভাবে? ওরাতো আমার সমকক্ষ না, ওদের সাথে কি আমার শত্রুতা করা চলে? তবে একটা পক্ষ কিছু লোককে দিয়ে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।
বিষয়টি নিয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নুর এ আলম বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর দুই পক্ষই অভিযোগ দিয়েছে এবং মামলাও হয়েছে। তারা প্রথমে নিজেরাই মীমাংসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছে। পরে মীমাংসা করতে না পেরে পরে অভিযোগ দিয়েছে। এজন্য মামলা রুজু হতে একটু দেরি হয়েছে। আর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হয়েছে। সেটিও আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।