সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জাহিদ মালেক, তার পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে জেলা প্রশাসকের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ অন্যান্য কোন সিনিয়র নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন তারা।
মানববন্ধনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ইস্রাফিল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী বিশ্বাস,সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক খান তুষার, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল, জেলা যুব মহিলালীগের আহবায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরইশী সুমন,সাধারণ সম্পাদ রাজিদুল ইসলাম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মামাতো ভাই ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ইস্রাফিল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইডিসিএল প্লান স্থাপনেরবাঁধাগ্রস্ত করছেন। তিনি একটি পত্রিকায় ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদের প্রকাশ করিয়েছেন। এতে করে মানিকগঞ্জ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উন্নয়নমূলক কাজে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে নানা তালবাহানা করে উন্নয়ন কাজটির ব্যাঘ্যাত করছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক মিথ্যা তথ্য ও অশালীন বক্তব্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন।
তবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, আমি কারও বিপক্ষে নই, আমি শুধু সঠিকভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। তবে আওয়ামী লীগ নেকতাকর্মীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩মে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে ‘ডিসির সইয়ের অপেক্ষায়: মন্ত্রীর পরিবারের পকেটে ঢুকবে শতকোটি টাকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানা যায়, ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) সরকারি পুরাতন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্লান প্রতিষ্ঠান মানিকগঞ্জে সরিয়ে নিতে প্রায় দিুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড মানিকগঞ্জে প্রকল্পটি স্থাপনের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজায় ৩১.৫ এক জমি ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া যায়। উক্ত প্রকল্প বাস্তায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ১৭ জানুয়ারি জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জমির শ্রেণীর পরিবর্তনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে (ডিও) লেটার দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এরপর ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি নিবন্ধন মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজার নাল জমি শ্রেণী পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত ও সরকারি কাগজপত্র অনুযায়ী প্রস্তাবিত ভূমি নাল শ্রেণীর ভূমির অর্ন্তভুক্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বালু ভরাট করে তৎকালীন অসাধু ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজসে ভিটি শ্রেনীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুধু ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজার রেট বা মূল্য পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজার ভিটি/বাড়ি শ্রেণীর প্রতি শতকের সরকারি রেট বা মূল্য ২৫ হাজার টাকার পরিবের্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করাও হয়েছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়। যার স্মারক নম্বর-০৫.৩০.৫৬০০.৩০৩.০২.০০৫.২১-৪২)। এতে উল্লেখ্য করা হয়, ইডিসিএল প্লান্ট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজায় ৩১.৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছে। ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজায় প্রস্তাবিত ৩১.৫ একর জমি অধিগ্রহণে সরকারের খরচ হবে ১১৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। অথচ জমির প্রকৃত শ্রেণী নাল হিসেবে অধিগ্রহণ করা হলে খরচ হবে মাত্র ৬৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৫০ টাকা। কেননা আশপাশের মৌজার সমশ্রেণীর মৌজার রেট বা মূল্য অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির একাধিক ব্যক্তি জানান, ইডিসিএল’র প্লান মানিকগঞ্জে হস্তান্তর হবে, সেটি বুঝতে পেরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবার ও নিকট আত্মীয়রা কয়েক বছর আগে থেকেই মেঘশিমুল এলাকায় জমি কেনা শুরু করে দেয়। বতর্মানে মেঘশিমুল (প্রস্তাবিত) এলাকার প্রায় সব জমিই মন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের। ইডিসিএল’র প্লানের জন্য ওই জমি অধিগ্রহণ করা হলে সরকারের প্রায় অতিরিক্ত ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।