সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বসতভিটা ও ফসলি জমি রক্ষায় বেউথা-পৌলি মৌজায় কালিগঙ্গা নদীর বালু মহাল ইজারা বন্ধ ও আন্ধারমানিক-জয়নগর গ্রাম রক্ষায় ড্রেজার দিয়ে নদীর মাটি(বালু) কাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মাটি(বালু) কাটায় মসজিদ ও কবরস্থান, ফসলি জমি, বসতবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
শনিবার(১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আন্ধারমানিক ও জয়নগর গ্রামবাসী কালিগঙ্গা নদীর তীরে এই মানববন্ধন করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আন্ধারমানিক ও জয়নগর গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, একটি কবরস্থান ও মসজিদ এবং শতাধিকা বসতবাড়ি নদী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্ধারমানিক ও জয়নগর এলাকায় কালিগঙ্গা নদী থেকে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার(খননযন্ত্র) বালু মাটি উত্তোলন করায় নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলিজমি। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকেরা। বেউথা ও পৌলি মৌজা থেকে এই বালু মাটি ড্রেজার দিয়ে কাটা হচ্ছে। আন্ধারমানিক ও জয়নগর এলাকায় নদীর তীরবর্তী এসব ফসলি জমিতে ভূট্টা, খেসারি, মাসকালই, তিলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। বালু মহাল ইজারা দেওয়ায় নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করছে ইজারাদারা। গ্রামবাসী মৌখিকভাবে ইজারাদারদের লোকজনকে বাঁধা দিলেও গ্রামবাসীর কথা শোনে না। বরং উল্টো গ্রামবাসীদের নানা ভয়ভীতি দেয়ায় তাঁরা।
আন্ধারমানিক গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক(৭৩) বলেন, তারা(ইজারাদার) সমানে নদী থেকে ড্রেজার দিয়া মাটি(বালু) কাটতাছে। আমাগো সব ফসলি জমি নদীতে ভাইঙগ্যা গেতাছে। আমার ৪৫ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতক জমি নদীতে চলে গেছে। কৃষক মানুষ আমরা ওগো(ইজারাদার) বাঁধা দিলেও শোনে না। আমাগো আরো ভয়ভীতি দেখায়। আমরা এখন কি করুম, আামগো চলার উপায় নাই।
জয়নগর গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ(৫৫) বলেন, ইজারাদারের কথা বইল্যা(বলে) ড্রেজার দিয়া নদী থ্যাইকা(থেকে) মাটি কাইটা নেওয়ায় আন্ধারমানিক, জয়নগর ও পৌলি এলাকার নদী তীরের জমিগুলো শেষ হইয়্যা(হয়ে) জাইতাছে (যাচ্ছে)। ওরা নদী তো কাটে না, জমি কাইটা(কেটে) ফাইলতাছে(ফেলছে)। নদী কাটতে কাটতে এমন অবস্থা হইছে এহন(এখন) বসতবাড়ি ভাঙার উপক্রম হইছে। বাপ-দাদার ১৮ বিঘা জমি আমরা দুই ভাই চাষবাষ কইরা খাইতাছি। ড্রেজার দিয়ে বিগত ৫-৬ বছরে নদীর মাটি কাটায় ১৪ বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। আমাগো এই ক্ষতির দায়ভার কে নিবো, কে আমাগো ক্ষতিপূরণ দিবো। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু মাটি কাটা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই কৃষক।
আন্ধারমানিক গ্রামের আকের কৃষক লাল মিয়া(৬৬) বলেন, আমাগো তিন ভাইয়ের ৭০০ শতক জমি ছিল। এর মধ্যে ৩৫০ শতকের বেশি জমি কালিগঙ্গা নদীতে ভেঙে গেছে। ওরা(ইজারাদার) রাইতে রাইতে এইখান থেকে ড্রেজার দিয়া মাটি কাটে, দিনেও কাটে। আমরা বাঁধা দিলে, উল্টো আমাগো ভয়ভীতি দেখায়। ওদের সাথে আমরা পারি না, গরীব মানুষ। আর কিছুদিন এইভাবে মাটি কাটলে আমাগো এই গ্রাম থাইক্যা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া লাগবো। আগে কিছু জমি ভাঙছে, গতবছর আর এইবার বেশি ভাঙছে। জমিজাম হারিয়ে আমরা এতিম হয়ে যাচ্ছি, আবারও যদি ইজারা দেয় তাহলে এই জমিও থাকবো না, গ্রামটাও নদীতে ভাইঙগা যাইবো। ফসলি জমি ও গ্রাম রক্ষায় চলতি বছর বাল মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে কাছে দাবি জানান তিনি।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু মোহাম্মদ নাহিদ বলেন, বেউথা-আন্ধারমানিক ও পৌলী মৌজায় বালু মহালের ইজারা দেওয়ার কারণে প্রতিবছর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ড্রেজার দিয়ে এই বালু মাটি কাটা ও ইজারা দেওয়া বন্ধ না হলে কৃষকদের বিঘা বিঘা ফসলি জমি, কবরস্থান, মসজিদসহ গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়বে। জনস্বার্থে বালু মহালে এই এলাকাগুলো ইজারা অন্তভুক্ত না করা জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, বেউথা, আন্ধারমানিক ও জয়গনর এলাকায় বাল মহালের ইজারা বন্ধে মানববন্ধনের কোনো স্বারকলিপি আমরা পাইনি। তবে লিখিত আবেদন পেলে, তার গুরত্ব বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।