বিনোদন ডেস্ক : ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ এবং সবশেষ ‘দামাল’। গত বছরে পর পর তিনটি ছবিতে দর্শকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজ। ভালো অভিনয়ের কারণে দর্শক তাকে অভিনেতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পরিচালক-প্রযোজকদেরও পছন্দের তালিকায় চলে এসেছেন রাজ। ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ হিট হওয়ার পর তিনি শতাধিক ছবির প্রস্তাব পান বলে সম্প্রতি জানান।
কিন্তু ভালো প্ল্যাটফর্ম পেয়েও রাজ অভিনয় করতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন এই অভিনেতার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। কারণ, তার প্রতি স্ত্রী পরীমনির নিষেধাজ্ঞা। এই চিত্রনায়িকা রাজকে বহু নিষেধাজ্ঞায় ফেলে দেন বলে দাবি ওই ঘনিষ্ঠজনদের। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্যতম হলো নাজিফা তুষি, বিদ্যা সিনহা মিমদের সঙ্গে অভিনয় করা যাবে না।
রাজ-ঘনিষ্ঠদের দাবি, পরীমনির দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞার কারণে রাজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, ভালো কাজের সুযোগ পেয়েও বারবার হারাতে হচ্ছে তাকে। তা থেকে তৈরি হয়েছে হতাশা। সেই হতাশা থেকেই পরীমনির সঙ্গে তার সংসার জীবনে অশান্তি, যা এতদিন পরীমনি ও রাজ তাদের নকল হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
অনেকের দাবি, রাজের প্রতি পরীমনির দেওয়া নিষেধাজ্ঞাই তার সংসার জীবনের জন্য কাল হয়েছে।
কিন্তু নাজিফা তুষি এবং বিদ্যা সিনহা মিমদের সঙ্গে কেন রাজকে কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন পরীমনি? যেখানে এই দুই নায়িকার সঙ্গে রাজের চারটি ছবিই সিনেপ্রেমীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এবং প্রশংসিতও হয়েছে। তাহলে কেন রাজকে তুষি ও মিমের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন পরীমনি?
মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা রাজের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে নাজিফা তুষির বিপরীতে। শোনা যায়, এই দুজনের রসায়ন রুপালি পর্দা ছাড়িয়ে বাস্তবেও শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজ ও তুষি। যদিও টেকেনি সে সম্পর্ক। তারই মাঝে গত বছর ফের জুটি বেঁধে ‘হাওয়া’তে কাজ করেন রাজ-তুষি, যেটি সুপারহিট হয়।
কিন্তু মুক্তির আগে ‘হাওয়া’র প্রচার-প্রচারণায় কখনোই একসঙ্গে দেখা যায়নি রাজ এবং তুষিকে। তারা সবসময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। এর কারণ নাকি পরীমনির নিষেধাজ্ঞা। স্বামীকে তুষির ধারেকাছেও ঘেষতে নিষেধ করেছিলেন পরীমনি।
এরপর সম্প্রতি আরেক চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন ওঠে রাজের। রাজ-মিম জুটি বেঁধে ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’ ছবি দুটি করেছেন। এর মধ্যে ‘পরাণ’ সুপারহিট। অন্যদিকে ‘দামাল’ হিট না হলেও প্রশংসায় ভেসেছেন রাজ-মিম জুটি।
পরীমনির দাবি, স্বামী রাজের সঙ্গে মিমের সম্পর্ক পেশাগত কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তা অনেক ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ নিয়ে কিছু দিন আগে বেশ হইচইও করেন পরীমনি। রাজ-মিমকে উদ্দেশ্য করে কখনো আকার ইঙ্গিতে, আবার কখনো সরাসরি নাম উল্লেখ করে অনেক কিছুই বলেন তিনি। ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে মিম সবকিছু পরিষ্কার করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, রাজের সঙ্গে পেশাগত কাজের বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই তার। তিনি তার স্বামী সনি পোদ্দারকে নিয়ে খুশি আছেন। তারপরও পরীমনি একের পর এক পোস্টে তাকে দোষারোপ করলে মিম ঘোষণা দেন, তিনি আর রাজের সঙ্গে কাজ করবেন না।
ওদিকে নিষেধাজ্ঞা ছিল পরীমনির দিক থেকেও। তিনি নাকি রাজকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, মিমের সঙ্গে আর কাজ করা চলবে না। এসব নিষেধাজ্ঞা রাজের ক্যারিয়ার হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মত অভিনেতার ঘনিষ্ঠজনদের। ফলাফল, ভাঙনের একেবারেই দ্বারপ্রান্তে তারকা দম্পতি রাজ ও পরীমনির সংসার।
এরইমধ্যে ছেলে শাহীম মোহম্মদ রাজ্যকে নিয়ে রাজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন পরীমনি। রাজকে তার জীবন থেকে চিরকালের জন্য ছুটিও দিয়ে দিয়েছেন। এসব কথা গত শুক্রবার ২০২২ সালের শেষ দিনে ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েও দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, রবিবার দেওয়া দুটি পোস্টে রাজের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও তুলেছেন পরীমনি। রাজ নাকি তাকে একাধিক বার মারধর করেছেন। এদিন পরীমনি দুটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, বিছানার চাদর এবং কোলবালিশে ছোপ ছোপ রক্ত। ছবি দুটি পোস্ট করে অভিনেত্রী লেখেন, তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন।
রবিবার অন্য আরেকটি পোস্টে পরীমনি লেখেন, ‘আমাদের এই সম্পর্ক এত দিন আমার এফোর্টে টিকে ছিল। কিন্তু বারবার গায়ে হাত তোলা পর্যায়ে পৌঁছালে কোনো সম্পর্কই আর সম্পর্ক থাকে না। স্রেফ বিষ্ঠা হয়ে যায়।’ এর প্রভাব তার সন্তানের উপরও পড়ছে। তাই স্বামী ও ছেলের ভালোর জন্যই তিনি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন পরীমনি।
২০২১ সালে ১৭ অক্টোবর রাজকে গোপনে বিয়ে করেন পরীমনি। সে খবর প্রকাশ করেন গত বছরের ১০ জানুয়ারি ফেসবুক পোস্টে। একই পোস্টে পরীমনি এও জানান, তিনি রাজের সন্তানের মা হতে চলেছেন। পরে ২২ জানুয়ারি তারা পুনরায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। গত বছরের ১০ আগস্ট তাদের কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান রাজ্য।
বলা হয়, এটি পরীমনির চার নম্বর বিয়ে। নায়িকা হওয়ার আগে নায়িকা দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার মধ্যে এক স্বামীর সঙ্গে নাকি এখনো ডিভোর্সই হয়নি। নায়িকা হওয়ার পর পরীমনি ২০২০ সালের মার্চে কামরুজ্জামান রনি নামে এক সহকারী পরিচালককে বিয়ে করেন। সেই সংসার মাত্র তিন মাস টিকেছিল। রনির সঙ্গে ডিভোর্সের পর অভিনেত্রী শরীফুল রাজকে বিয়ে করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।