কামাল হোসাইন : ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে আটকে পড়া প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। মঙ্গলবার ভোরে মা লুৎফুন্নাহারের সঙ্গে কথা হয় ছেলে রোকন উদ্দিনের। প্রায় ২০ মিনিটের কথায় বাবার ঋণের টাকা পরিশোধের কথা বলছিল মাকে।
ছেলের এমন খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা লুৎফুন্নাহার। জ্ঞান ফিরে পেয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমার ছেলে বাবার সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে মাটি কাটার কাজ করত। সব ছেলেরা এখনো মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে; যা কাজ পায় তাই কাজ করে। আমার ছেলেকে আমি ভিক্ষা চাই! প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলেরে ভিক্ষা চাই। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার ছেলেরে ফেরত চাই। এক বছর আগে আমার ছেলেকে বিয়ে করাইছি। তার বাচ্ছা অইবো। কি অইবো আমার। তারে পড়াশোনা করাইছি এই ঋণ এখনো শোধ করতে পারি নাই। জমিজমা বন্ধক। তার ভাই, বাবা এখনো কামলা (মানুষের বাড়িতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করা) দেয়। আমার কি অইবো! বলেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন লুৎফুন্নাহার।
বুধবার বিকালে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোণা ইউনিয়নের বাঘরুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
বাবা মিরাজ আলী হকবাক। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। এমন খবর শুনে হতবাক এলাকাবাসীও।
কয়লাবোঝাই জাহাজটি নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে ২৩ জন ক্রু নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন মঙ্গলবার ভোরে সেহেরির সময় কথা বলেন মা লুৎফুন্নাহারের সঙ্গে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
জাহাজে জিম্মি তৃতীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের বড় বোন শাহামিনা আক্তার বলেন, আমার ভাই রোকন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকৌশলী হিসেবে এক বছর ট্রেনিং করেন। এর পরের বছর ১৫ জুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। গত বছর মার্চে টাঙ্গাইল জেলায় স্কুলশিক্ষিকা তানিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। এখন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। আমরা টাকাপয়সা, চাকরি কিছু চাই না। সরকারের কাছে আবেদন, যেন সবাইকে সুস্থভাবে ফেরত দেওয়া হয়। আমরা তাদের সুস্থভাবে ফেরত চাই। আমরা সরকারের কাছে আমার ভাইকে ফেরত চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এখলাস উদ্দিন বলেন, রোকনরা ৩ ভাই ও এক বোন। দরিদ্র পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন। ভাই, বাবা এখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। যে কোনো মূল্যে রোকনকে ফেরত চান তারা।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিরাজ আলী অনেক কষ্ট করে ছেলে রুকন উদ্দিনকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করেছে। এই সন্তান ছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নাই। আমরা এলাকাবাসী সরকারের কাছে জলদস্যুদের কাছে জিম্মিদের উদ্ধারের আবেদন জানাই। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।