জুমবাংলা ডেস্ক : অক্টোবরের প্রথম দিকে যখন গাজায় বোমা বর্ষণে ব্যস্ত ইসরায়েল তখন জার্মানিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সহযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রি শহিদুল আলম। কিন্তু নৃশংস হামলা দেখে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাই নিজের কাজ ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ছিটমহলে হামলার প্রতিবাদ জানাতে সক্রিয় হয়ে পড়েন।
সাসমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পোস্টকে ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ বা ইহুদি বিদ্বেষী কন্টেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে জার্মানি থেকে শুরু করে পুরো ইউরোপে তার প্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সমসাময়িক আলোকচিত্রের জার্মানভিত্তিক প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বিনালা ফিয়ো অ্যাকটুয়েলে ফোটোঘাফি’। প্রদর্শনীর একজন কিউরেটরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ (ইহুদিবিদ্বেষপূর্ণ) হওয়ার অভিযোগে এটি বাতিল করা হয়।
জার্মানির ম্যানহাইম, লুডভিগসহাফেন ও হাইডেলবেয়ার্গ শহরে ২০২৪ সালের মার্চে প্রদর্শনীটি হওয়ার কথা ছিল। এ তিনটি শহর শহিদুল আলমের পোস্টকে ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শহিদুল আলম তার ১ লাখ ১৪ হাজার ফলোয়ারের পেইজে ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়ে পোস্ট করেন।
তার ৮ অক্টোবরের একটি পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘অর্ধ-উলঙ্গ ইসরায়েলি মৃতদেহ নিয়ে প্যারেড করার খবরটি ভয়ঙ্কর এবং এটি ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না… আমি মনে করি সমস্ত ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
২৯ অক্টোবর আরেক পেস্টে বলেছেন, ‘এই সপ্তাহান্তের ভয়াবহ সহিংসতা হল ইসরায়েলি বর্ণবাদের কুৎসিত বাস্তবতা, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রাষ্ট্রহীন মানুষের কয়েক দশক ধরে দখলদারিত্বের পচা ফল।’
ইহুদিবিদ্বেষী অভিযোগ টেনে ২১ নভেম্বর তাকে প্রদর্শনী থেকে বাদ দেয় ‘বিনালা ফিয়ো অ্যাকটুয়েলে ফোটোঘাফি’ কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘৭ অক্টোবরের পর শহিদুল আলমের সোশাল মিডিয়া পোস্টে এমনসব বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা হয়েছে যা ইহুদি-বিরোধী হিসেবে বিবেচনার যোগ্য।’
শহিদুল আলমের দুই বাংলাদেশি সহ-কিউরেটর তানজিম ওয়াহাব ও মুনেম ওয়াসিফ তার প্রতি সংহতি জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
তারা বলেছে, কথিত ইহুদি বিরোধী পোস্টের মধ্যে ছিল ‘বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শহিদুল আলমের একটি মন্তব্যহীন সাক্ষাৎকার, হলোকাস্টের সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধের তুলনা ও গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল রাষ্ট্র কর্তৃক গণহত্যার অভিযোগ।’
তারা আরও অভিযোগ করেছে যে আলম তার পেজ থেকে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে ‘বর্ণবাদী ও অন্যান্য তুলনামূলক মন্তব্য’ সরাননি যেগুলা তার পেজের অনুসারিরা করেছিলেন। শহিদুল আলম, ওয়াহাব ও ওয়াসিফ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘ইতিহাসের কোন দিকে আমরা দাঁড়াবো তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব আমাদের।’
শহিদুল আলম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি একজন জায়নবাদী বিরোধী যার মানে আমি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে, বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে। আমি ইহুদি বিরোধী নই এবং এটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে জার্মানি এই দুটিকে একত্রিত করেছে। তারা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এজেন্ডাকে প্রমোট করছে।’
২০১৮ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্র তুলে ধরে বিখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পান শহিদুল আলম। সেই বছর একটি সাক্ষাত্কারে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করার অভিযোগে তাকে ১০০ দিনের বেশি কারাগারে রাখা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।