জুমবাংলা ডেস্ক : ‘আমার এক ছেলে মারা গেছে, কিন্তু এখন অনেক ছেলে। সবাই আমাকে মা বলে ডাকে। এটা একটা প্রাপ্তি বটে। কিন্তু আমার চার বছরের নাতি তো তার বাবাকে আর কোনোদিন পাবে না। কষ্ট হয় তখন, যখন স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে সে পুলিশ দেখে ভয় পায়। সে বলে ওঠে, ওই যে দুষ্ট পুলিশ, আমার বাবাকে মেরেছে।’
কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান কলি। গতকাল শনিবার রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই-আগস্টের শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে আসেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিল শহীদ প্রিয়র শিশুকন্যা পদ্মপ্রিয় পারমিতা। অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রংপুর বিভাগের ৪৪ শহীদ পরিবারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে সহায়তার চেক দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে বিভাগের বাকি ২২ শহীদ পরিবারকেও এ সহায়তা দেওয়া হবে।
সহায়তা প্রদান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, আমরা দেশ নিয়ে ভাবছি, অঞ্চল নিয়ে নয়। অঞ্চলভিত্তিক ভাবনাগুলো আমাদের সংকুচিত করে দেয়, সংকীর্ণ করে দেয়। রংপুর অঞ্চল থেকে সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। দেশের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা যাদের মনে করেছেন উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত করা দরকার, তাদের যুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাহক বর্তমান চব্বিশের যোদ্ধারা। তাদের তালিকা স্বচ্ছভাবে প্রস্তুতের কারণে কিছুটা সময় লাগছে।
একই অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, শহীদ আবু সাঈদ সারাবিশ্বকে পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন সাহসের প্রতীক হিসেবে। সবাই জুলাই-আগস্টকে ভুলে গেলেও শহীদ পরিবার কোনোদিন ভুলতে পারবে না। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য চলছে। আমাদের জায়গা থেকে কঠোরভাবে বলতে চাই, শহীদ ও আহত ভাইদের নিয়ে বাণিজ্য চলবে না।
উত্তরবঙ্গ থেকে সরকারে উপদেষ্টা না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে কি একজনও উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য নেই? আমরা এ রকম কঠিন সময়ে নীরব থাকা এবং গা বাঁচিয়ে চলা লোকজনকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চাই না। উত্তরবঙ্গের একজন প্রতিনিধি দিতে হবে। যার যোগ্যতা আছে, দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যাকে উপযুক্ত মনে হবে, তাকেই উপদেষ্টা করা উচিত।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুব আলম স্নিগ্ধ এবং সারজিস আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল প্রমুখ। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।