জুমবাংলা ডেস্ক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, রেজিস্ট্রারসহ উপাচার্যের অনুসারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকালে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই আল্টিমেটাম দেন তারা।
একইসঙ্গে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ না করলে তাকেও শেখ হাসিনার মতো পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সকালে ভিসিসহ তার অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উপাচার্যের পদত্যাগসহ তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারের দাবি তোলেন। একইসঙ্গে ভিসিকে স্বৈরাচার ও শেখ হাসিনার দালাল আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগানও দেন তারা।
এদিকে, পদত্যাগের দাবির পর থেকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হচ্ছেন না উপাচার্যসহ তার অনুসারীরা। ফলে, অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে থাকাতে নিয়মিত একাডেমিক পরীক্ষা ও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে সেশনজটের।
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তাদের আল্টিমেটামকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। ইতিমধ্যে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্র স্বাক্ষরও করেছি। কিন্তু চলমান ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক আমি। শিক্ষার্থীদের আমানতের দায়িত্ব থেকে করতে পারছি না। সময় হলেই সংশ্লিষ্ট দফতরে পদত্যাগ জমা দেবো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের লেখা পদত্যাগপত্রে আমি স্বাক্ষর করবো না।’
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করতে হবে না। ধারণা করছি, চলতি সপ্তাহেই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট দফতর। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাতে মনোযোগ দিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন তিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিকালে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০ ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে ভিসি পদের মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পান তিনি।
তারা বলেন, নানা দুর্নীতির মধ্যে তিনি যবিপ্রবির ১৪ লিফট স্থাপন নিয়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়ম করে আলোচিত হন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। একে একে দেশের দুনীর্তিবাজ ভিসি ও কর্মকর্তারা পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলঙ্কমুক্ত করেছে। কিন্তু আমাদের ভিসি আন্দোলনের পরেও তিনি তার চেয়ার আঁকড়ে রয়েছেন। আমরা আর এই দুর্নীতিবাজ ও রাজনীতিক দলের দালালের অধীনে কোনও কার্যক্রম আর চাই না।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানী ঊর্মি বলেন, আমরা যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে বহিরাগত, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। তখন ভিসি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। তিনি যখন তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে পারেননি, তখনই তার ভিসির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তার দুর্নীতির তথ্য লোপাট করতে পদত্যাগ করছেন না। আমরা গত দুই সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছি, সেই আন্দোলনের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে তিনি তার পদেই আছেন। এই দুর্নীতিবাজ ভিসি ও রেজিস্ট্রারসহ তার অনুসারীরা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন তার অবস্থা শেখ হাসিনার মতো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।