বিনোদন ডেস্ক : দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে, শিল্পী তখন হতাশায় নিমজ্জিত। এই শিল্পী ঘরপোড়া ‘জলের গান’র রাহুল আনন্দ নয়। তার সব তো পুড়েই ছাই। তবে এর মধ্যে যুদ্ধ শেষে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরেও আরও একজন প্রকৃত শিল্পীকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে আগুনের দিকে, সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। তিনি চঞ্চল চৌধুরী, যিনি গত দেড় দশকে দেশের সবচেয়ে সফল ও প্রশংসিত বহুমাত্রিক অভিনেতা।
সেই অভিনেতা যেন হতাশায় ডুবে গেছেন। একদিকে ঘরে মায়ের অসুস্থতা অন্যদিকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে তাকে নিয়ে ট্রল, এতটা দুঃসময় বুঝি আসেনি অভিনেতার জীবনে। অভিনেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এতটা খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাবো, সেটি কল্পনাও করিনি। আমি তো সারাটা জীবন মানুষের বিনোদনের জন্য কাজ করে গেছি। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ তো করিনি। রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিটির জন্য কতো ডাক পেয়েছি, কখনও সাড়া দিইনি। অথচ এখন আমি সেই রাজনীতিরই শিকার। আমার ভক্তরাই আমাকে ভুল বুঝছেন। এই কষ্ট বোঝানোর সাধ্য আমার নেই।’
চঞ্চলের ভাষায় স্পষ্ট, কিছু দুষ্কৃতকারী পরিকল্পনা করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য প্রকাশ করে তার ভক্তদের চটিয়ে দিয়েছে। অভিনেতা ছাত্রদের আন্দোলন সমর্থন করেননি, সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গান শোনানোর গল্পটাও ভাইরাল হয়ে আছে সোশ্যালে। সব মিলিয়ে চঞ্চল চৌধুরী প্রচণ্ড অস্বস্তি আর হতাশার মধ্যে আছে।
সেটি থেকে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এবং ভক্তদের কাছে তার অবস্থান ও পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে একটি বার্তা দিয়েছেন অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘আমি চঞ্চল চৌধুরী বলছি। আমার নাম ব্যবহার করে কোনও বিদেশি/দেশি পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি কিছু লেখা হয়, তার দায় আমার নয়। কারণ এখন পর্যন্ত আমি কোনও পত্র-পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও বিষয়ে বক্তব্য দিইনি। আমি সাধারণ একজন শিল্পী। পেশাগত কারণ ছাড়া কোনও কিছুর সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমার মায়ের চরম অসুস্থতাজনিত কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি সক্রিয় নই। দেশে শান্তি বিরাজ করুক, সকলের মঙ্গল হোক।’
এমন ঘোষণা সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রকাশের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন অভিনেতা। কিন্তু না। এ যেন হিতে বিপরীত। মন্তব্যের ঘরে নেতিবাচক মন্তব্যের ঢেউ উঠেছে।
প্রসঙ্গটি টানতেই থমথমে কণ্ঠে চঞ্চল চৌধুরী বললেন, ‘আমি প্রতিটি মন্তব্য মন দিয়ে পড়ছি। কিছু মন্তব্য বহুবার পড়ছি। এবং আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এর একটি মন্তব্যও মুছবো না। ধরে নিলাম, দেশের মানুষের কাছ থেকে এগুলো আমার শিল্পী জীবনের অন্যতম স্বীকৃতি। যাদের জন্য গত তিনটা দশক অক্লান্ত শ্রম, ঘাম, মেধা আর সততার ভেতর দিয়ে নিজেকে পরিচালিত করেছি। চাইলে এমপি-মন্ত্রী হতে পারতাম। হইনি। কারণ, এই মানুষের প্রিয় শিল্পী হয়ে মরতে চেয়েছি। গালির মাধ্যমে এখন আমি সেই স্বীকৃতি পাচ্ছি। গালিগুলো মুছবো না, পুরস্কার হিসেবে রেখে দিলাম।’
চঞ্চল চৌধুরী জানান, গত ১৫ দিন অভিনেতা ও তার পরিবারের সদস্যরা ভুগছিলেন প্রচণ্ড জটিলতায়। কারণ গ্রামের বাড়িতে তার মায়ের অসুস্থতা। এর মধ্যে চলছিল কারফিউ আর অবরোধ। ইন্টারনেট আর ফোনের নেটওয়ার্কও ছিল না থাকার মতো। সব মিলিয়ে অভিনেতা ব্যস্ত ছিলেন অসুস্থ মা’কে গ্রাম থেকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জটিলতায়। এর মধ্যে ঢাকায় নিয়ে আসতে পারলেও ভর্তি করাতে পারেননি হাসপাতালে। কারণ কারফিউ আর সড়ক অবরোধ। অবশেষে ঢাকায় বোনের বাসায় রেখেই চিকিৎসা শুরু করেন মায়ের।
চঞ্চলের ভাষায়, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পুরোটা সময় আমি ও ভাই-বোনেরা মায়ের অসুস্থতায় আটকে ছিলাম। দেশে কী ঘটে যাচ্ছে, সেদিকেও খোঁজ রাখার সুযোগ পাইনি। মা এখন খানিকটা সুস্থ, দেশটাও স্থির হচ্ছে ক্রমশ। এর মধ্যে একটি পক্ষ আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমার বিভিন্ন মন্তব্য প্রচার করছে। অথচ গত ১৫/২০ দিনে আমি কোনও মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পাইনি। এখন এই অসহায় রক্তক্ষরণের গল্পটা কাকে বোঝাবো আমি?’
বলা দরকার, ১৫ আগস্ট ভারতে মুক্তি পাচ্ছে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত টলিউডের সিনেমা ‘পদাতিক’। যেখানে কিংবদন্তি নির্মাতা মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন সৃজিত মুখার্জি। ছবিটির প্রথম দিনের প্রথম শো দেখতে এবং প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভারত যাওয়ার কথা থাকলেও এই বিষণ্ণ সময়ে তিনি যাবেন কিনা; সেটি চূড়ান্ত করতে পারেননি ‘মনপুরা’র অসহায় সোনাই।
কারণ নেটাগরিকদের কাছে অভিনেতা এখন ‘আয়নাবাজি’র শরাফত করিম আয়না! বিপরীতে অভিমানের ‘কারাগার’-এ আটকে আছেন চঞ্চল চৌধুরী। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।