বিনোদন ডেস্ক : এই পৃথিবীতে অনুকরণ আর পরিচিতির মাঝখানে এক সূক্ষ্ম সীমারেখা আছে, যা অনেক সময়েই ঝাপসা হয়ে যায়। সেই সীমারেখার মাঝে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম কাদরিকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ—নম্রতা, কঠোর পরিশ্রম আর মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
ইব্রাহিম কাদরি মূলত আলোচনায় আসেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের মতো দেখতে হওয়ার কারণে। তবে তার গল্পটা শুধু চেহারার মিলেই থেমে নেই—এর পেছনে রয়েছে কঠোর সাধনা, দৃঢ় মনোবল আর আত্মোন্নয়নের এক বাস্তব উদাহরণ। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
শুরুটা হয়েছিল গুজরাটের জুনাগড় শহরে, খুবই সাধারণ এক জীবন থেকে। স্মৃতিচারণ করে ইব্রাহিম বলেন, “আমি যখন ১৫-১৬ বছর বয়সী, তখন থেকেই মানুষ আমাকে শাহরুখ খান বলে ডাকত। স্কুলে, কলেজে—সর্বত্রই এই ডাক শুনতাম।”
তবে চেহারার মিল থাকলেও তার জীবন ছিল অনেক সংগ্রামের। “আমি দেয়াল আঁকতাম, হোর্ডিং বানাতাম, দোকানের সাইনবোর্ড তৈরি করতাম। এটা আমার জীবিকার জন্য করতাম। ঘরে তেমন কিছুই ছিল না, যা আয় করতাম, তা দিয়েই চলত খাবার আর বিল মেটানো।”
২০১৭ সালে শাহরুখের ‘রইস’ মুক্তির পর থেকেই ইব্রাহিম সিদ্ধান্ত নেন এই চেহারার মিলকে পেশায় রূপ দেওয়ার। তিনি বলেন, “আমার আগে থেকেই ‘রইস’-এর মতো গোঁফ আর দাড়ি ছিল। সিনেমা মুক্তির পর মানুষ আমাকে দেখে পাগলের মতো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিল। তখন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। পার্টি বা বড় কোনো জায়গায় গেলেই মানুষ হৈচৈ করত, কেউ কেউ কেঁদে ফেলত, কেউ বা টানাটানি করত।”
এই আকস্মিক খ্যাতি শুরুতে কীভাবে সামলাবেন বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। তবে এক ঘটনা তাকে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে বাধ্য করে—রাজকোটের খান্ধেরি স্টেডিয়ামে। ইব্রাহিম বলেন, “আমি একটা ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম, হঠাৎ সবাই চেঁচামেচি করতে শুরু করে, কাঁদছিল, আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছিল। আমি প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে ছিলাম। ভয় পেয়ে যাই, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শেষে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। তখনই বুঝি, ব্যাপারটা অনেক বড়।”
এরপর তিনি নিজের লুক, স্টাইল, এমনকি নাচের ভঙ্গি নিয়েও কাজ শুরু করেন। “আমি জানতাম না কিভাবে নাচ করতে হয়। কিন্তু এসআরকে-র সিনেমা দেখতে শুরু করলাম, শুধু বিনোদনের জন্য নয়, শেখার জন্যও। মানুষ যেভাবে আমাকে দেখছে, সেটাকে সত্যি প্রমাণ করতেই আমাকে প্রস্তুত হতে হয়েছিল।”
‘নকল’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘কপিক্যাট’—এসব শব্দ অনেক শুনতে হয়েছে তাকে। প্রথমদিকে কষ্ট পেয়েছিলেন ঠিকই, তবে এখন তিনি একে শিল্প বলেই মনে করেন। “আমার মনে হয় কপিও একটা শিল্প। সব পেশা কোনো না কোনো অনুপ্রেরণার ফল। পুরো বিশ্বটাই কোনো না কোনোভাবে অনুকরণেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি সেটাকেই গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছি।”
তবে তিনি মনে করেন, তার কাজের মানে রয়েছে আলাদা উচ্চতা। “আমি কোনো সস্তা কপি নই। আমি ২ টাকার মাস্ক নই। আমি একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছি। আগে যেখানে ডুপ্লিকেটরা ২-৫ হাজার টাকা পেতেন, এখন তারা ১০-১৫ হাজার পাচ্ছেন। আমি এই মান বাড়িয়েছি। এখন আমি প্রতি অনুষ্ঠানে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা নিই। মানুষ তাতেই খুশি থাকে।”
তবে শাহরুখ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি কখনো। ইব্রাহিম বলেন, “আমি কখনো চেষ্টা করিনি দেখা করার। এটা একটা স্বপ্নের মতো, ঠিক যেন ফেরারি গাড়ি—দেখে ভাল লাগে, চালানোর কল্পনাও ভালো। কিন্তু যখন সেটা আপনার গ্যারাজে থাকে, তখন সেই উত্তেজনা হারিয়ে যায়। আমি সেই অনুভূতিটা হারাতে চাই না।”
বর্তমানে ইব্রাহিমের বয়স ৪৯ বছর। কিন্তু বয়সকে তিনি কখনোই বাধা মনে করেন না। “আমি বাচ্চাদের সঙ্গে খেলি, ওদের মতো করে হাসি। এটাই আমাকে তারুণ্যে রাখে। এখনো আমার বিয়ে হয়নি। পরিবারকে বলেছি অপেক্ষা করতে। আমি এই যাত্রায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চাই। তবে হ্যাঁ, মনে হচ্ছে, এখন সময় এসেছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।