লাইফস্টাইল ডেস্ক : একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, মানুষ পাখির ডিম বা ছানা স্পর্শ করলে তাতে তার ঘ্রাণ লেগে যায়। এ কারণে মা পাখি আর সেই ডিমে তা দেয় না বা ছানার যত্ন নেয় না। এই ধারণা থেকে অনেক সময় ঝড়ে বা অন্য কোনো কারণে পাখির বাসা থেকে ছানা বা ডিম পড়ে গেলে সেটি না ছোঁয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এমনকি ঘরে পোষা পাখির ডিম ও ছানা ছুঁতেও বারণ করা হয়। এ ধারণা কি সত্য? পাখি কি মানুষের ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে?
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ভার্জিনিয়া জু তাদের ওয়েবসাইটে প্রাণীদের নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মানুষ পাখির ছানা বা ডিম স্পর্শ করলে মা পাখি সেটি আর গ্রহণ করে না—এই ধারণার উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় না। তবে এটি সত্য নয়। পাখিদের ঘ্রাণশক্তি খুব বেশি নয়। আর তাই কোনো মানুষ এদের ছানা স্পর্শ করলে এরা সেটি শনাক্ত করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ল্যাবের পক্ষীবিদ্যা বিভাগের জীববিজ্ঞানী মিয়োকো চু বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সকে বলেন, পাখির ঘ্রাণশক্তি কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর মতো তীব্র নয়। তাই পাখির ছানা বা ডিম ছুঁলে মা পাখির পক্ষে সেটি শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। ফলে মানুষ ছোঁয়ার কারণে ডিম বা ছানাকে পরিত্যাগ করার প্রশ্নও ওঠে না। সাধারণত, পাখি ছানাদের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান হয়; সহজে ছানাদের পরিত্যাগ করে না।
মানুষের স্পর্শের কারণে পাখি নিজেদের ছানাদের পরিত্যাগ করে কি না এমন প্রশ্নে একই কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ক্রিস্টোফার এস বেয়ার্ড। তিনি বলেন, পাখির ঘ্রাণশক্তি দুর্বল, এরা নিজেদের বাসা বা ছানার কাছে মানুষ এসেছে কি না সেটি চোখে না দেখা পর্যন্ত বুঝতে পারে না। তাই কখনো যদি পাখির বাসার বাইরে পালকহীন ছানা পাওয়া যায়, তাহলে নির্দ্বিধায় সেটিকে বাসায় তুলে দিতে পারেন।
বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন সায়েন্টিফিক আমেরিকান পাখি ও অন্যান্য প্রাণী মানুষের স্পর্শের কারণে এদের ছানাদের পরিত্যাগ করে কি না তা নিয়ে ২০০৭ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, কেউ ছানা বা ডিম ছুঁলে মা পাখি এগুলোকে পরিত্যাগ করে এমন ধারণা পাখি সংক্রান্ত মৌলিক জীববিজ্ঞান ও ছানাদের প্রতি অভিভাবক পাখিদের সহজাত দায়িত্ববোধের বিষয়টির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রকৃতপক্ষে অসাধারণ ঘ্রাণশক্তি সম্পন্ন পাখি খুব কমই আছে।
আমেরিকান পক্ষীবিদ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফ্র্যাঙ্ক বি. গিল এ প্রসঙ্গে ম্যাগাজিনটিকে বলেন, যে পাখিই হোক, এরা সহজে এদের ছানাদের ত্যাগ করে না, বিশেষ করে মানুষের স্পর্শের প্রতিক্রিয়ায় তো নয়ই। ফ্র্যাঙ্ক বি. গিল বলেন, বাসা বানানো বা ডিম পাড়ার সময় হওয়ার পর্যায়ে যদি শিকারির আক্রমণের শঙ্কা তৈরি হয় তখন অভিভাবক পাখিরা নতুন জায়গায় গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে। তবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর সাধারণত তারা বাসা ছেড়ে যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের জীববিজ্ঞানী টমাস ই মার্টিন বলেন, পাখিরা মূলত ছানা ও ডিমের সম্ভাব্য ক্ষতি ও বিপদের শঙ্কা থেকে বাসা বদলায়। একই প্রসঙ্গে সান দিয়েগো চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী পার্কের পাখি কিউরেটর মাইকেল মেস বলেন, অধিকাংশ পাখিরই ঘ্রাণশক্তি খুব দুর্বল। এরা মানুষের ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে না। পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ঘ্রাণশক্তি আছে শকুনের। এরা দূর থেকে মৃত প্রাণীর ঘ্রাণ পায়।
প্রাণী ও প্রকৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এফফি ইয়াও নেচার সেন্টার এক প্রতিবেদনে জানায়, বাসা থেকে পড়ে যাওয়া ছানাকে মানুষ স্পর্শ করলে মা পাখি সেটিকে আর গ্রহণ করে না এটা একটা প্রচলিত ধারণা। বহু বছর ধরে এটি প্রচলিত। প্রকৃতপক্ষে মা পাখি ছানাকে প্রত্যাখ্যান করে না। কারণ, এরা ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে না। পাখিরা সাধারণত ছানাদের প্রতি নিবেদিত এবং এদের যত্ন নেওয়া থেকে সহজে বিরত হয় না।
আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসের এক প্রতিবেদনেও মানুষের স্পর্শের কারণে পাখির ডিম বা ছানা পরিত্যাগের ধারণাটিকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।