আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুকুর মানুষের ‘বন্ধু প্রাণী’ হিসেবে পরিচিত। অনেকের কাছে এটি সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী। তবে সব কুকুরের আচরণ এক রকম হয় না। কিছু কিছু কুকুর আক্রমণাত্মকও হয়ে থাকে। আর একটি আক্রমণাত্মক কুকুর তার মালিকের সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এ বিষয়ে সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অতিবেগুনি রশ্মির বেশি বিকিরণের কারণে দিনের বেলা কুকুরের কামড়ের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
গবেষকেরা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি শহরের কুকুরের কামড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এ সময়ের মধ্যে শহরগুলোতে ৭০ হাজার কুকুরের কামড়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
গবেষকেরা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, তীব্র গরমের দিনে কুকুরের কামড়ের ঘটনা চার শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ বেশি হলে এ বৃদ্ধি ১১ শতাংশ এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে তিন শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার প্রমাণ পান তারা।
উচ্চ তাপমাত্রা এবং আক্রমণাত্মক মনোভাবের মধ্যে সম্পর্ক ইতোমধ্যে মানুষ, রেসাস বানর এবং ইঁদুরের মধ্যে পাওয়া গেছে।
বর্তমান গবেষণার প্রধান গবেষক ক্লাস লিনম্যান বলেন, তাপমাত্রায় পরিবর্তন এসব প্রাণীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ায়। তাপমাত্রা প্রাণীদের প্রতি মানুষের আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এ বিষয়ে একমত পোষণ করে স্পেনের মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটির (ইউসিএম) ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ও পশুর আচরণ বিশেষজ্ঞ স্টেফানিয়া পিনেদা বলেন, তাপমাত্রার কারণে যে বিতৃষ্ণা তৈরি হয় তা আগ্রাসনে রূপ নিতে পারে।
গবেষক লিনম্যান বলেন, অতিবেগুনি রশ্মি মস্তিষ্কের স্ট্রাইটামে ডোপামিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। মস্তিষ্কের এই অংশটি অবধারণ ও তার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
লিনম্যান ব্যাখ্যা করে বলেন, বিষয়টির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের মতো কাজে প্ররোচিত করতে পারে। অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মি কোনো কাজের প্রতিক্রিয়ায় আগ্রাসীভাব তৈরি করতে পারে।
পিনেদা বলেন, আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ন্ত্রিত হয় সেরোটোনিন ও ডোপামিন দ্বারা। অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ ডোপামিনের মাত্রা কমিয়ে দিলে উদ্বেগের লক্ষণ তৈরি করতে পারে, যা আগ্রাসনে রূপ নিতে পারে।
গবেষকরা দেখতে পান, সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা কম। লিনম্যান বলেন, সম্ভবত মানুষ এসময় অনেকটা নিরুদ্বেগ থাকে। প্রাণীর সাথেও আচরণে স্বতঃস্ফূর্ত থাকে মানুষ।
অধ্যাপক স্টেফানিয়া পিনেদা বলেন, পোষাপ্রাণীরা মানুষের কর্মব্যস্ততার দিনে বেশিরভাগ একা থাকে। তাদের মধ্যে বিরক্তি জন্মাতে পারে। যা তাদের উদ্বেগ বাড়ানোর কারণ হতে পারে। আর ছুটির দিনে প্রাণীরা সাধারণত তাদের মালিকদের সাথে বেশি সময় কাটায়, খেলাধুলা করে বা আরাম করে।
কুকুর কেন কামড়ায়?
গবেষণার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষকেরা বলেন, কামড়ের রেকর্ডের মধ্যে কুকুরের জাত বা লিঙ্গ কিংবা কোনো ধরনের সংক্রমণের কথা উল্লেখ নেই। বা কামড়ের শিকার হওয়া মানুষের বয়স, লিঙ্গ, প্রাণীর সাথে আগের কোনো পরিচয় আছে কি না কিংবা আক্রমণের তীব্রতার কথাও বলা হয়নি।
পিনেদা বলেন, কুকুরের জাত কামড়ের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে না। অনেক সময় বড় কুকুরের তুলনায় ছোট কুকুরের মধ্যে আগ্রাসন বেশি দেখা যায়। আর রেকর্ডের ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলে। কারণ ছোট কুকুর কামড়ালে অনেকে চিকিৎসা নিতে আসে না আর তা নথিভুক্তও হয় না।
মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান অনুষদের পশুচিকিৎসক ও গবেষক মনিকা বোয়াদা বলেন, কুকুরের কামড়ের ফলে শারীরিক ক্ষতর পাশাপাশি সংক্রমণ ও জলাতঙ্ক হতে পারে।
গবেষকেরা বলেন, কামড়ের ঘটনায় প্রাণীটি পূর্বপরিচিত হওয়ার সম্ভবনাই বেশি থাকে। কারণ আমরা সাধারণ অপরিচিত কুকুরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি না। আর প্রাণীরাও বিনা কারণে আক্রমণ করে না।
পিনেদা বলেন, কুকুর কামড়ের আগে সতর্ক করে। কিন্তু মানুষ তার ভাষা বুঝতে পারে না। কিছু লক্ষণ আছে যেগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত — যেমন কুকুর যদি শরীরকে টানটান অবস্থায় রাখে, চুলের মাথা যদি দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা দাঁত দেখা যায়। এসব সংকেতের পর কুকুর গর্জে ওঠে এবং এরপর কামড় দেয়। সূত্র: ডেইলি মেইল, মিরর অনলাইন, ন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড, ন্যাচার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।