লাইফস্টাইল ডেস্ক : মাথা ন্যাড়া করলে চুল গাঢ় বা ঘন হয়- এমন ধারণা বহুকাল থেকে প্রচলিত। আবার এতে চুলের মান উন্নত হয় এবং টাক হওয়া ঠেকানো যায়- এমনটাও অনেকে বিশ্বাস করেন। আর এ কারণে তরুণদের মধ্যে মাথা ন্যাড়ার ধারণাও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আসলেই কি এভাবে চুল গাঢ় বা ঘন হয়? মাথা ন্যাড়া করলে টাক হওয়া ঠেকানো যায়? নাকি এটি কেবলই একটি ভুল ধারণা? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ২০০৭ সালে মেডিকেল বা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রচলিত ধারণা বা শ্রুতি কথা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বহুকাল ধরে মানুষের মধ্যে প্রচলিত চিকিৎসাসংক্রান্ত ৭টি প্রচলিত ধারণা বা শ্রুতি কথা নিয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে একটি ছিল- মাথা ন্যাড়া করলে চুল দ্রুত বাড়ে, গাঢ় বা ঘন হয়ে উঠে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। ১৯২৮ সালের শুরুর দিকে এক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা যায়, ন্যাড়া করা বা চুল কামানোর সঙ্গে চুলের বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, চুল ন্যাড়া করা বা কামানো চুল বৃদ্ধির হার বা চুলের গাঢ়ত্বে কোনো প্রভাব ফেলে না। আসলে কেউ মাথা ন্যাড়া করলে চুলের মৃত অংশটুকু তারা চেঁছে ফেলে দেন। হেয়ার ফলিকল, মানে যা থেকে চুলটা গজায়, তা রয়ে যায় চামড়ার নিচে, সেটা কিন্তু ব্লেড স্পর্শ করে না। একইভাবে, ন্যাড়া করার পর গজানো চুল সূর্য বা অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে না আসায় ন্যাড়া করার আগের চুল থেকে বেশি কালো দেখায়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চুল কামানোর সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি বা ঘনত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রচলিত এই ধারণার মূল জড়িয়ে আছে চুল কামানোর ফলে নতুন করে ওঠা চুলের ভিন্নতায়। নতুন চুল সাধারণত ঘন ও কালো দেখায়। কারণ, নতুন চুল ওঠামাত্রই প্রাকৃতিক উপাদানের সংস্পর্শে আসে না। সূর্যের আলো, সাবানসহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান চুলকে হালকা করে দিতে পারে। এসব কারণে মানুষ মনে করে চুল ন্যাড়া করলে এটি দ্রুত, গাঢ় বা ঘন হয়ে উঠে, যা আসলে ভুল ধারণা।
চর্মবিদ্যার অধ্যাপক ড. লরেন্স জিবসনকে চুল কামানোর সঙ্গে এর ঘনত্ব ও গাঢ় হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, চুল কামানোর সঙ্গে চুলের ঘনত্ব, রং পরিবর্তন কিংবা বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। চুল কামানোর পর প্রথম দিকে কিছু কারণে ঘন বলে মনে হলেও কিছুদিন পর দেখা যায় তেমন পরিবর্তন হয়নি।
বিশেষজ্ঞ প্রশ্নোত্তর পর্বে পাওয়া এই উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একাডেমিক চিকিৎসাকেন্দ্র মায়ো ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
একই বিষয়ে পুরুষের ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে কর্মরত অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান ভাইটাম্যান জানায়, চুল কামানোর সঙ্গে চুলের ঘনত্ব বাড়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। মানুষের চুলের ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের দ্বারা। মাথা ন্যাড়ার মধ্য দিয়ে এই জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সম্ভব না। তবে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাথা ন্যাড়া করায় চুলের ঘনত্ব বাড়ে, তবে সেটি সাময়িক। চুল বাড়তে থাকলে ঘনত্ব কমতে থাকে।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, মাথা ন্যাড়া করার সঙ্গে চুলের ঘনত্ব ও রং পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি ভুল ধারণা।
মানুষের এ ভুল ধারণারর সঙ্গে আরও একটি বিষয় জড়িয়ে আছে। ধারণা করা হয়, মাথা ন্যাড়া করা টাক হওয়া ঠেকাতে পারে। তবে ‘বিজ্ঞানসম্মত নয়’ বলে এ ধারণাকেও খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ডার্রমাটলজি ক্লিনিক।
এই স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বলছে, এসব ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া শ্রেয়। পুরুষের মাথায় টাক পড়ার অন্যতম একটি কারণ, জেনেটিক বা জিনগত বৈশিষ্ট্য। আবার অনেক সময় খাওয়া-দাওয়ার কারণেও এমনটি হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগ্রহনও জরুরি। এছাড়া চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহও নিশ্চিত করা জরুরি।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথা ন্যাড়া করা ভালো। বার্মিংহাম ডার্রমাটলজি ক্লিনিকের মতে, কারও মাথায় খুশকিজনিত সমস্যা থাকলে সে ক্ষেত্রে ন্যাড়া হয়ে যাওয়া ভালো। কারণ, চুল না থাকলে খুশকিও নেই। আবার অনেকে ফ্যাশনের উদ্দেশ্যেও মাথা ন্যাড়া করতে পারেন, যদি তাকে ন্যাড়া মাথায় সুদর্শন দেখায়।
এসব ছাড়াও স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন বলছে, মাথা ন্যাড়া করা একইসঙ্গে সময় এবং অর্থও বাঁচায়। তবে মাথা ন্যাড়া করার কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। ঘন ঘন মাথা ন্যাড়া করার ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এছাড়া চুল না থাকার কারণে মাথার ত্বক উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া, মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
সিদ্ধান্ত
মাথার চুল ঘন ঘন ন্যাড়া করলে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং চুল গাঢ় বা ঘন হয়- এমন ধারণা বহুল প্রচলিত। ফলে অনেক সময়ই দেখা যায়, চুল গাঢ় ও ঘন করতে আবার কখনো টাক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই চুল ন্যাড়া করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘শ্রুতিকথা’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।