জুমবাংলা ডেস্ক : ভরা মৌসুমেও সমুদ্রে বড় ইলিশের দেখা মিলছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে যেতে পারছেন না বরগুনার জেলেরা।
জুলাই থেকে অক্টোবর ইলিশের ভরা মৌসুম। প্রতি বছর এ সময় নদী ও সাগরে ধরা পড়ে রুপালি ইলিশ। কিন্তু এ বছরের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৩ জুলাই জেলেরা সাগরে নামলেও জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত বড় ইলিশ।
অনেকে ঘাটে নোঙর করে অনুকূল আবহাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। যারা সমুদ্রে যাচ্ছেন তাদের কেউ খালি হাতে ফিরছেন, আবার কেউ ইলিশের পরিবর্তে অল্প পরিমাণ জাটকা নিয়ে ফিরছেন। বড় ইলিশ কম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছেন উপকূলের জেলেরা।
জেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন পর সাগরে নামছি, আবহাওয়া খারাপ। তাই দুদিন ছিলাম সাগরে, মাছ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। বড় ইলিশের দেখা নেই, ছোট কয়টা জাটকা পেয়েছি। বিক্রি করলে তাতে বাজারের খরচা হবে না । আর যে আশা নিয়ে সাগরে যাওয়া, সে অনুযায়ী বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।’ ‘দু-তিন বছর সাগরে কোনো বড় ইলিশ পাচ্ছি না। মালিকের কাছ থেকে অনেক টাকাও নিয়েছি। যদি সাগরে মাছ পেতাম, তাহলে ধারদেনা শোধ করে সংসার চালাতে পারতাম।’
স্থানীয় জেলেদের দাবি, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় ট্রলার সব ধরনের মাছ শিকার করছে। অন্য সময় দেশীয় ট্রলারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভারতীয় ট্রলার মাছ শিকার করছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’
এফবি সম্রাট-১ ট্রলারের মালিক মো. মোবারক আলী মৃধা জানান, তার তিনটি ট্রলার সাগরে রয়েছে। একদিকে ডিজেল ও মুদি পণ্যের দাম বেড়েছে। একটি ট্রলারে ২০০ জাটকা পেয়েছে, এতে তো কিছু আসবে না, সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া প্রত্যেক জেলের পেছনে অনেক খরচ হয়। এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আড়তদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়েছেন। কিন্তু সাগরে মাছ না পাওয়ায় সে টাকা শোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘ধারদেনা করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন জেলেরা। সাগরে মাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে, কিছু ট্রলারে মাছ পাইছে। বড় কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট জাটকা ছাড়া কিছু মিলছে না। বরগুনা জেলায় অনেক জেলে রয়েছেন, এই ৬৫ দিনের অবরোধে বসে খেতে হচ্ছে। এখন সাগরে মাছ ধরার সময় আবহাওয়া খারাপ। তাই তারা অনেকে যেতে পারছেন না। আশা করি, সাগরে বড় মাছ আসবে। ভারতের ট্রলারগুলো বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে অবরোধের সময় মাছ ধরে নিয়ে যায়, এটা বন্ধ করা হলে হয়তোবা আমরা ভালো মাছ পাব।’
এদিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোয় ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দামও চড়া। পাইকারি বাজারে এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৬৫-৭০ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৫৫-৬০ হাজার এবং ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪০-৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা ক্রেতারা মনে করছেন বাজারে মাছের দাম একটু বেশি। তাই অনেকে ইলিশ না কিনে অন্য মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বরগুনা স্থানীয় মাছ বাজারে আসা জাহিদুল ইসলাম মেহেদী বলেন, ‘অনেকদিন হয় ইলিশ মাছ কিনতে পারছি না। কারণ দাম অনেকটা বেশি। এক কেজি ইলিশ মাছ দাম প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রামের মাছ ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে যদি দাম থাকে, তাহলে তো আমরা সাধারণ মানুষ মাছ কিনে খেতে পারব না।’
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘বরগুনা জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৭ হাজার ২৫০ জন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলারের মালিক ও জেলেদের। আবহাওয়া ভালো হলে জেলেরা সমুদ্রে আশানুরূপ মাছ পেলে অর্থনৈতিক দুর্দশা-দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’
এদিকে সমুদ্রে কোনো প্রকার নৌযান দিয়ে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌ-পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে যথাক্রমে জননিরাপত্তা বিভাগে ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।