অপ্রতিরোধ্য বালু খেকোরা, পদ্মায় থামছে না অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্য

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় মারধরের শিকার হয়েছেন এক আইনজীবী। অবৈধ ড্রেজার বন্ধে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা। তবে তাঁরাও চান অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হোক। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করে ভারী খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

Padma

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, পদ্মায় যে ড্রেজার চলছে কয়েকদিন আগে তা গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায় ছিলো। এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে বাঁধা দেয়ায় ড্রেজারগুলো পশ্চিমে কাঞ্চনপুর মৌজায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
চলছে বালু উত্তোলন। এলাকার কেউ বাঁধা দিতে গেলে প্রসাশনের অনুমতি রয়েছে বলে ড্রেজার সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন। এছাড়াও কেউ বাঁধা দিতে গেলে মারধর
করা হয় ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির হুমকি দেয়া হয়। ফলে নিরুপায় হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করতে হয় নদীপাড়ের মানুষদের।

স্থানীয় এক জেলে জানান, গত কয়েক বছর ধরে পদ্মায় প্রচণ্ড ভাঙ্গণ চলছে। ইতোমধ্যে কৃষি জমি, বাড়ি-ঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। সরকার পদ্মার ভাঙ্গণ রোধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তবুও ভাঙ্গণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এরমধ্যে আবার ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। এতে বর্ষা মৌসুমে নদী
ভাঙ্গণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে শুধুমাত্র প্রশাসন ইচ্ছে করলেই পারবে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে স্থানীয়রা পেরে উঠার সুযোগ নেই। সব দপ্তর ঠিকঠাক করেই তারা বালু ব্যবসা করে। পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ না করা হলে পদ্মাপাড়েরর বাসিন্দাদের জন-জীবন বিলীন হয়ে যাবে।

গত রোববার দুুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গৌরবিদ্যা অংশের পদ্মা নদীতে দেখা যায় দুটি ভারী খননযন্ত্র দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গোপীনাথপুর মধ্যপাড়া এলাকার মামুন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি এই ড্রেজার দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। মামুন মোল্লা দাবি করেন তিনি ড্রেজারের শ্রমিক। ড্রেজারের বিষয়ে বলতে পারবেন রিপন গাজী। আর রিপন গাজী বলেন, তিনি ড্রেজারটি দেখাশোনা করেন। তার মামা শিবালয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আকবর এই ড্রেজারের মালিক। তিনিই সব বলতে পারবেন।

মুঠোফোনে কথা হয় আলী আকবরের সঙ্গে। বালু মহালের সীমানার বাইরে ড্রেজার চলার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, হরিরামপুর উপজেলার বালু মহাল তিনি
নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছোট ভাই আকিবুল এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।”

এর কিছুক্ষণ পর এই প্রতিবেদকের মোবাইলে কল করেন আকিবুল। তিনি বলেন, প্রশাসন-সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই ড্রেজার চলছে। এটা নিয়ে নিউজ করলে প্রবলেম। এই প্রতিবেদককেও ম্যানেজের চেষ্টা করেন তিনি।

কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা ও মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, এলাকার মানুষের মঙ্গলের জন্য পদ্মা নদীর পাড় থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ড্রেজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নিষেধ করেছিলাম। এর জের ধরে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা আমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আমিসহ আমার এলাকার হাজারো মানুষের দাবি ড্রেজার সরিয়ে পদ্মাপাড়ের মানুষের জন-জীবন রক্ষা করুন। পদ্মার ভাঙ্গণ রোধ ছাড়া আমাদের আর কোন চাওয়া নেই বলে জানান এই আইনজীবী।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, বালু মহালের বাইরে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। তারপরও অনেকেই প্রায়ই ইজারার নাম করে বালু উত্তোলন করে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।