জামাল উদ্দিন : জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিট জেনারেল শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. এনায়েত উল্লাহ। একইসঙ্গে তিনি ওই কার্যালয়ে নামাজের ইমামতিও করতেন। বছর খানেক আগে অবসরে যান। ১৯৮৭ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি গোডাউন কিপার হিসেবে জনতা ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১০ সালে অফিসার ও ২০১৬ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান। তার বিরুদ্ধে পাওয়া নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের দীর্ঘ অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ ও নানা অনিয়মের তথ্য। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিট জেনারেল শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার মো. এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য পেয়েছে দুদক। ব্যাংকের গোডাউন কিপারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন গার্মেন্টসের মালামাল বিক্রি ও সিবিএ নেতা পরিচয়ে প্রমোশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ এবং নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত সপ্তাহে দাখিল করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এনায়েত উল্লাহ ও তার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১২ টাকা মূল্যের স্থাবর এবং ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৪২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের তথ্যসহ সর্বমোট ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয় অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।
এনায়েত উল্লাহর আয়কর নথি পর্যালোচনায় দুদক জানতে পারে, তিনি ২০১৬-২০১৭ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন। ওই করবর্ষে তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত ব্যাংকের চাকরির বেতন-ভাতার সঞ্চয় বাবদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদর্শন করেছেন। অনুসন্ধানে ওই আয়সহ ২০২২-২৩ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তার ৪ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ টাকার আয় পাওয়া যায়। এ আয়ের বিপরীতে পারিবারিক ব্যয় ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৩৪০ টাকা ও ঋণ পরিশোধ বাবদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ টাকাসহ মোট ব্যয় ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার ২৪০ টাকা দেখানো হয়। এ আয় ছাড়াও তার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকার ঋণ রয়েছে। ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪ টাকা।
তার সম্পদ, দায়, আয়, ব্যয় পর্যালোচনা করে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মো. এনায়েত উল্লাহ অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৮২ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারে রয়েছে বিধায় তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, এনায়েত উল্লাহর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনও দুর্নীতি করিনি। প্রতিহিংসাবশত একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনেছে। তিনি নিজেকে ধার্মিক পরিবারের সন্তান ও তার অর্জিত টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে সংবাদ না দিতেও তিনি অনুরোধ করেন। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।