আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন একটি ঋণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। নতুন এই কর্মসূচি নিয়ে এরইমধ্যে সমঝোতায় পৌঁছেছে উভয়পক্ষ। সেই সঙ্গে এ কর্মসূচির আওতায় ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে পাকিস্তান।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, এ ঋণের অর্থের বিনিময়ে ইসলামাবাদ আরও এক দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এসব কমূর্সচির একটি লক্ষ্য হবে দেশটির করজাল আরও বিস্তৃত করা। তবে আইএমএফের শর্ত মেনে পাকিস্তান যেসব সংস্কার কর্মসূচি এর আগে বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলো তেমন জনপ্রিয় ছিল না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফের এই ঋণ টলায়মান পাকিস্তানি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শাহবাজ শরিফের সরকারকে বেশ খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দেবে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ৩৭ মাসের দেনদরবার শেষে পাকিস্তান সরকার ও আইএমএফ এই ঋণের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার পর এ নিয়ে ২৫ বারের মতো আইএমএফের ঋণ নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো- এই ঋণ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন চলতি বছর দেশটিকে ২৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আইএমএফের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর শুক্রবার ঋণের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। তবে ঋণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন হয়নি। খুব শিগগির আইএমএফের নির্বাহী পরিষদ এই ঋণের অনুমোদন দেবে, যা কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
তবে আইএমএফে এই ঋণ কবে অনুমোদন দেবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
তবে জানা গেছে, আইএমএফ থেকে পাকিস্তান এই ঋণ পাবে তিন বছর মেয়াদি একটি কর্মসূচির আওতায়। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, এ কর্মসূচি পাকিস্তানের ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা জোরদার এবং শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাণবন্ত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে’।
গত কয়েক মাস ধরেই নতুন এ ঋণের বিষয়ে শাহবাজ সরকারের কর্মকর্তারা ইসলামাবাদে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঋণটি পেলে এটি হবে ছয় দশকে আইএমএফের কাছ থেকে পাকিস্তানের পাওয়া ২৪তম ঋণ কর্মসূচি।
তবে এ কর্মসূচির সঙ্গে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি হলো- রাজস্ব বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া। চলতি অর্থবছরে পাকিস্তান সরকার ৪৬ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রাজস্ব হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করছে। গত বছরের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ শতাংশ বেশি।
রাজস্ব বাড়াতে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ এখন অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে কারণে তারা প্রথাবিরোধী পদক্ষেপও নিচ্ছে। যেমন আয়কর রিটার্ন দেয়নি এমন ব্যক্তিদের নামে নিবন্ধনকৃত ২ লাখ ১০ হাজার সিম কার্ড বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর উদ্দেশ্য হলো- আয়কর রিটার্ন দাখিলে মানুষকে বাধ্য করা।
আইএমএফের আরেকটি দাবি হলো- রাজস্ব ঘাটতির হার কমিয়ে আনা। আগামী বছরে ঘাটতি ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সরকারি ঋণের পরিমাণ এখন ২৪২ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফ বলছে, ২০২৪ সালে সরকারি আয়ের অর্ধেকই খরচ হবে এ ঋণ পরিশোধে।
বিশ্লেষকেরা অবশ্য সরকারের পদক্ষেপগুলোকে ‘ভাসা–ভাসা সংস্কার’ বলে সমালোচনা করেছেন। মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে এসব কর্মসূচি শুধু আইএমএফকে খুশি করতে হাতে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী হাসানাইন বলেন, আইএমএফের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে সেই পুরোনো ধারাই দেখা যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও আইএমএফ এ ধরনের ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু মৌলিক সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কী সেটা গ্রহণ করবে?
দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই মূলত আইএমএফ থেকে একের পর এক ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। দেশটি চলতি বছরের এপ্রিলেই আইএমএফের থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পায়। ঋণের পর পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারির (২৮ শতাংশ) থেকে কমে বর্তমানে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।