সাইফুল ইসলাম : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. রাজু হোসেনকে ঘিরে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এক স্ত্রী ও দুই সন্তানের জনক এই রাজনীতিক সম্প্রতি এক বিবাহিতা স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্কের সূত্র ধরে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই পরিবারের শান্তি ও তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন রাজু হোসেন। একজন দায়িত্বশীল দলের নেতা হয়ে তার এমন আচরণে স্থানীয়ভাবে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত:
স্বজনদের বরাতে জানা যায়, ২০০৬ সালে তেওতা বাছেট এলাকার আয়নাল হোসেনের ছেলে মো. শামিম হোসেনের সঙ্গে কাটাখালি গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে সানজিদা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ২০১২ সালে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। একই বছর সানজিদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন।
শামিম বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির কারণে বাইরে থাকতেন। এই সুযোগে শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু হোসেনের সঙ্গে সানজিদার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। প্রায় তিন বছর আগে তাদের পরকীয়া সম্পর্ক ফাঁস হয় বলে অভিযোগ করেন শামিম।
তিনি জানান, “স্ত্রীর আচরণে সন্দেহ হলে আমি নজরদারি শুরু করি। এরপর রাজুর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ হাতে পাই। ঝামেলা তৈরি হলেও তারা গোপনে সম্পর্ক চালিয়ে যায়।”
সম্প্রতি সানজিদা কলাগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে উথলি এলাকায় রাজুর সহায়তায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্বামীর বাড়ি থেকে গহনা, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র নিয়ে যান। স্থানীয়রা এক পর্যায়ে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং রাজুকে গণপিটুনি দেয়।
শামিম অভিযোগ করেন, “সানজিদা বাড়ি ফিরে আসার কথা বলে আমার কাছ থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়। পরে জুন মাসে আমাকে তালাক পাঠায়। এখন আমার সন্তানকেও নিয়ে রাজুর সঙ্গে পালিয়েছে।”
প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ:
এদিকে রাজুর প্রথম স্ত্রী মোসা. আইরিন আক্তারও শিবালয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে রাজু হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “রাজুকে আমার পিতার ব্যবসার দায়িত্ব দিলে সে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে পরকীয়ায় জড়িয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। সম্প্রতি দৌলতপুরের সানজিদা নামে এক নারীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজু আমার দেওয়া স্বর্ণালংকার, জমি, গরু, মোটরসাইকেল ও ফেরিঘাটের শেয়ার দখলে রেখেছে। এখন সে আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না, ভরণপোষণও দেয় না।”
দলীয় প্রতিক্রিয়া:
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুর কাদের বলেন, “বিষয়টি আমি এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তবে শ্রমিক দল নেতা এস.এম. রাজু হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:
সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে জনগণ সততা ও দায়িত্বশীলতা আশা করে। কিন্তু রাজু হোসেনের আচরণ তা কলঙ্কিত করেছে। তারা বলেন, “এ ধরনের অনৈতিক সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত নয়, সমাজের নৈতিক ভিত্তিকেও দুর্বল করে। দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।