ধর্ম ডেস্ক : মানবজাতির জন্য সময় আল্লাহর দেয়া এক অপার নিয়ামত। সময় অমূল্য এক সম্পদ, জীবনের ব্যর্থতা ও সফলতা সময়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে। আরবি একটি প্রবাদ রয়েছে যার অর্থ হলো- ‘সময় স্বর্ণের চেয়েও দামি’।
আমরা সবাই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলে নিরবধি, একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। মানব জাতির সব কাজ সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। যারা সময়কে গুরুত্ব দেয়; তারাই জীবনে সফলকাম হয়। ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। শরিয়তের বিধানগুলো, যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সবগুলোই সময়ের সাথে সম্পৃক্ত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের কর্তব্য’। (সূরা নিসা-১০৩) উল্লিখিত আয়াতে নামাজের সাথে সময়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে দিবস-রজনী, প্রভাত, সন্ধ্যা, অপরাহ্ন, কাল ইত্যাদির শপথ করে সময়ের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে।’ (সূরা আসর, আয়াত : ১-৩)
অমূল্য সম্পদ সময়ের অপচয় জীবনে ব্যর্থতা নিয়ে আসে। তাই তো হাদিসে প্রতিটি মুহূর্তকে গণিমত মনে করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের আগে মূল্যায়ন করবে ও সদ্ব্যবহার করবে। প্রথমত তোমার যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, সচ্ছলতাকে দরিদ্রতার আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে এবং জীবনকে মৃত্যুর আগে।’ (বায়হাকি-১০২৪৮)
সময়ের শিকলে বাঁধা আমাদের জীবন। সময়ের সদ্ব্যবহার অপরিহার্য বিষয়। যারা সময়কে অপচয় করে তারা কাল হাশরের ময়দানে আফসোস করবে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-‘হে রাসূল যদি তুমি দেখতে অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নত করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম এখন তুমি আমাদের পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করো আমরা সৎ কাজ করব নিশ্চয়ই আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।’ (সূরা সাজদাহ-১২)
সময় মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে এক আমানত। মৃত্যুর পর আমাদেরকে এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হিসাব দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার পা দু’টি সরবে না। (অর্থাৎ আল্লাহর দরবার থেকে যাওয়ার তাকে অনুমতি দেয়া হবে না) যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে, তার আয়ু সম্পর্কে, সে তা কিসে ক্ষয় করেছে? তার ইলম (বিদ্যা) সম্পর্কে, সে তাতে কী আমল করেছে? তার মাল সম্পর্কে, কী উপায়ে তা উপার্জন করেছে এবং তা কোন পথে ব্যয় করেছে? আর তার দেহ সম্পর্কে, কোন কাজে সে তা ক্ষয় করেছে?’ (তিরমিজি-২৪১৬)
প্রতিটি কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সময়কে কাজে লাগানোই হলো সময়ানুবর্তিতা। মানবজাতির মধ্যে সময়ানুবর্তিতার খুব অভাব। মুসলমানরাই সময়ের ব্যাপারে বেশি উদাসীন। তাই তো রাসূল (সা:) যারা সময়কে কাজে লাগায় না, তাদেরকে ব্যর্থ বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দু’টি নিয়ামত দ্বারা যথাযথ উপকৃত হতে অনেক মানুষই ব্যর্থ হয়। তা হচ্ছে সুস্থতা ও অবসর সময়।’ (বুখারি-৬০৪৯)
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া মিফতাহুল উলুম, নেত্রকোনা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।