বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : রেডিয়াম মৌলটি পর্যায় সারণি এবং রসায়ন দুটোর জন্যই বিশেষ। মৌলটির আবিষ্কারের মাধ্যমেই বিশ্ব প্রথম পারমাণবিক শক্তির বিষয়ে জানতে শুরু করে। এটি ধাতু হিসেবে প্রথম প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ। ১৯০২ সালে ফরাসি-পোলিশ রসায়নবিদ মেরি কুরি ও তাঁর স্বামী পিয়ারে কুরি দীর্ঘ গবেষণা শেষে মৌলটি পান।
খনি থেকে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামের ভগ্নাংশ (পিচব্ল্যান্ড) থেকে তাঁদের এই পরীক্ষা শুরু হয়। টানা ৪৫ মাস চলে অক্লান্ত বিশ্লেষণ। হাজার দশেক বার আংশিক কেলাসন শেষে ০.১ গ্রাম রেডিয়াম ক্লোরাইড পাওয়া যায়। কুরি দম্পতি ও তাঁদের সহকর্মীরা আরেকটি অজানা বিষয় পেলেন।
কাজ করার সময় তেজস্ক্রিয় পদার্থটি ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি। একইসঙ্গে টিউমার কোষও ধ্বংস করছে মৌলটির রেডিয়েশন বা রশ্মি। এটি ছিল ক্যানসার নিরাময়ে ‘কুরি থেরাপি’র প্রথম তেজস্ক্রিয় রশ্মি-নির্ভর চিকিৎসা। আজকের আধুনিক রেডিয়োথেরাপির পথপ্রদর্শক এই থেরাপি।
বিস্ময়কর নীল আভাময় রেডিয়াম শক্তির এক প্রাকৃতিক অংশ হিসেবে পরিচিতি পায়। ফলে দাঁত মাজার পেস্ট থেকে চুল ফিরে পাওয়ার ওষুধ- সবখানে ব্যবহার শুরু হয়। এমনকি খাবারেও। সাজসজ্জার প্রসাধনীতে রেডিয়াম উপাদান হিসেবে দিয়ে ‘রেডিয়াম অ্যান্ড বিউটি’ শিরোনামে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় পত্রিকায়।
যুক্তরাষ্ট্রে বিকিরণ বিষক্রিয়ার করুণ এক ঘটনা ঘটে।
তিনটি ঘড়ি কারখানায় উজ্জ্বল প্রিন্ট হিসেবে রেডিয়াম ব্যবহার করা হয়। কারখানার মহিলা কর্মীদের জানানো হয় এটি ক্ষতিকর নয়। কর্মীরাও ঘড়ির কাঁটা ঠিক করতে তা দাঁতের চাপে ঠিক করেন। অতি দ্রুতই তাঁদের দেহে দেখা দিল রক্তাল্পতা ও ক্যানসার। তিন কারখানার প্রায়ে এক শ নারী শ্রমিক মারা যান। মেরি কুরি নিজে আক্রান্ত হন রক্তাশূন্যতায়। তিনি নিজেও তখন জানতেন না কী ভয়াবহ এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ। তিনি এসব পদার্থ (আইসোটোপ)-এর নমুনা নিজের পকেটে নিয়ে ঘুরতেন। ফলে নিরাপত্তা কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকি সবই ছিল মানুষের ধারণার বাইরে।
মেরি কুরির মৃত্যুর পর তাঁর গবেষণাপত্রেও গবেষকরা তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করেন। জাদুঘরে রাখা সেসব নমুনা এখনও তেজস্ক্রিয়তা বহন করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিজ্ঞানীরা এসব স্পর্শ করেন। জীবদ্দশায় পদার্থ ও রসায়নে দুবার নোবেল পেয়েছেন এই মহীয়সী। বিজ্ঞানকে ভালোবেসে তিনি তাঁর এসব গবেষণার কোনো পেটেন্ট বা মেধা-স্বত্ব নেননি। তাঁর মৃত্যুর পর যেন বিজ্ঞানীরা স্বাধীনভাবে এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য।
দশা
রাসায়নিক সংকেত: Ra
পারমাণবিক সংখ্যা: ৮৮
নামকরণ: ল্যাটিন ল্যাটিন রেডিয়াস অর্থ রশ্মি। তা থেকে রেডিয়াম।
বিক্রিয়া
রেডিয়ামের চারটি প্রাকৃতিক আইসোটোপ রয়েছে। এদের পারমাণবিক ভর ২২৩ থেকে ২২৮-র মাঝে। এছাড়াও রেডিয়ামের অসংখ্য আইসোটোপ ল্যাবে গবেষণায় পাওয়া যায়। এসমস্ত আইসোটোপের অর্ধায়ু ১১.৪ দিন থেকে ১৬০০ বছর হয়ে থাকে। রেডিয়াম থেকে একটি আলফা কণা নির্গত করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে রেডনে পরিণত হয়। গ্যাসীয় এই উপাদানের নিজস্ব তেজস্ক্রিয়তা আছে। এবং রয়েছে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
রেডিয়ামের সাথে সম্পর্কিত মৌল
পোলনিয়াম (Po 84)
ইউরেনিয়াম (U 92)
বিজ্ঞানী
পিয়েরে কুরি
১৮৫৯-১৯০৬
ফ্রেঞ্চ রসায়নবিদ। রেডিয়ামের সহ-আবিষ্কারক। স্ত্রী মেরি কুরির সাথে গবেষণা করেন।
মেরি কুরি
১৮৬৭-১৯৩৪
পোলিশ-ফ্রেঞ্চ রসায়নবিদ। রেডিয়ামের আবিষ্কারক ও শনাক্তকারী।
জন জ্যাকব লিভিংগুড
১৯০৩-১৯৮৬
যুক্তরাষ্ট্রন রসায়নবিদ। ১৯৩৬ সালে তিনি কৃত্রিমভাবে রেডিয়াম তৈরি করেছিলেন।
মূল: ব্রায়ান ক্লেগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।