জুমবাংলা ডেস্ক : পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার এক বছর পার হয়েছে। তাতেই ধস নামে লঞ্চ ব্যবসায়। বহরে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল লঞ্চ যুক্ত হলেও ব্যবসায়িকভাবে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চ-মালিকরা। ইতোমধ্যে লোকসানের বোঝা কমাতে বিক্রি হয়ে গেছে সুরভী কোম্পানির একটি লঞ্চ। নেওয়া হচ্ছে আরও নানা উদ্যোগ।
এত ধসের পরও আগামী বছর ঈদের আগে নৌপথের রাজা হিসেবে নামছে আরও একটি নতুন লঞ্চ। ওই সময় নতুন লঞ্চ হিসেবে এম খান লঞ্চটি যাত্রীদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে লঞ্চ কোম্পানির মালিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম খানের চেয়ারম্যান মাহফুজ খানের দাবি, তিনি এমনভাবে লঞ্চটি তৈরি করছেন, যাতে যাত্রীরা কোনও কাজ না থাকলেও লঞ্চটি দেখতে যেতে বাধ্য হবেন।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে সর্বশেষ নতুন লঞ্চ হিসেবে নামতে যাচ্ছে ‘এম খান-৭’ নামের বিশালকায় বিলাসবহুল ও অত্যাধুনিক লঞ্চ। দুই বছর ধরে কীর্তনখোলা শাখা নদীর তীরবর্তী স্থানে চলছে এর নির্মাণযজ্ঞ, যা শেষ হবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি। অর্থাৎ আগামী বছরের ঈদুল ফিতরের আগে লঞ্চটি যুক্ত হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে।
বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে নতুন লঞ্চ রয়েছে সুন্দরবন-১৬। সম্প্রতি এটি যাত্রীবহরে যুক্ত হওয়ায় যাত্রীরা এখন এটিকেই আধুনিক লঞ্চ হিসেবে দেখছেন। তবে সেই জায়গা দখল করতেই এ উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এম খান লঞ্চ কোম্পানির পরিচালক রাফসান রাফি।
যা থাকছে ‘এম খান-৭’-এ
রাফসান রাফি বলেন, বিশালকায় লঞ্চটির তৃতীয় তলায় ছাদে থাকছে কফি হাউস। সেখানে যাত্রীরা নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এ জন্য দেওয়া হবে বসার সিট। সে ক্ষেত্রে ডেক থেকে শুরু করে কেবিন এবং ভিআইপি কেবিনের যাত্রীরা সেখানে যেতে পারবেন। নদী দেখতে দেখতে ভ্রমণ যাত্রীদের বাড়তি আনন্দ দেবে।
বিনোদনসুবিধা
লঞ্চের তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলায় থাকছে আড়াই শ সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন এবং সোফা। অন্য সব লঞ্চে যেভাবে কেবিন সাজিয়েছে, তার চেয়েও ব্যতিক্রম হবে নতুন লঞ্চের প্রতিটি কেবিন। আরমাদায়ক বেডের সঙ্গে স্মার্ট টিভি এবং যত ধরনের সাজসজ্জার প্রয়োজন রয়েছে, সব থাকবে। টিভিতে সব ধরনের সিনেমা থাকবে। যাত্রী তার ইচ্ছামতো উপভোগ করবেন। থাকবে অডিও গান। এর সঙ্গে থাকছে স্মার্ট কেবিন বয়। তাদের ব্যবহারে যাত্রীরা যেন মুগ্ধতা প্রকাশ করে, সেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকবে। কেবিনের সামনে প্রশস্ত বারান্দায় আড্ডা দিতে পারবেন যাত্রীরা। এ জন্য বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। থাকছে কেনটিনের সুবিধাও।
প্রাথমিক চিকিৎসা
দ্বিতীয় তলায় কেবিনে যাত্রীদের জন্য পৃথক ডাইনিং ও নামাজ পড়ার স্থান থাকবে। থাকছে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট। যাত্রীদের মনে হবে যেন তারা পাঁচ তারকা হোটেলে আছেন। থাকছে ফাস্টফুডের দোকান। এ ছাড়া যাত্রীদের কেউ অসুস্থ হলে বা শারীরিক কোনও সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
নানা সুবিধা মিলবে ডেকে
কেবিনের যাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে ডেক যাত্রীদের জন্যও আরামদায়ক ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ডেকে স্মার্ট টিভি থেকে শুরু করে গরমের দিনে ঠান্ডা রাখতে বাড়তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রীদের নামাজের স্থান, ডাইনিং ও শিশুদের ফিডিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে ডেকে।
অসুস্থ ও বয়স্কদের জন্য সুবিধা
অন্য সব লঞ্চের চেয়ে প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতিটি তলায় বিপুল সংখ্যক টয়লেট রাখা হয়েছে। সাধারণ টয়লেটের পাশাপাশি অসুস্থ বা বয়স্কদের জন্য কমোডেরও ব্যবস্থা থাকছে। লঞ্চ চলাচলে ব্যবহার করা হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ঘন কুয়াশা ভেদ করে এবং চর এলাকা ও অপর লঞ্চের সঙ্গে কোনোভাবেই ধাক্কা যেন না লাগে, এ জন্য ব্যবহার হবে প্রযুক্তি।
এম খান লঞ্চের চেয়ারম্যান মাহফুজ খান বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার আগেই লঞ্চ নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে নির্মাণকাজ পিছিয়ে যায়। এখন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় লঞ্চের ব্যবসায় একপ্রকার ধস নামে। কিন্তু ওই সময় আর পেছনে ফেরা সম্ভব ছিল না। তাই দুটি লঞ্চ নির্মাণের ইচ্ছা ছিল। তবে সেখান থেকে সরে এসে একটি লঞ্চ নির্মাণ করছি।
তিনি আরও বলেন, নতুন এই লঞ্চে ভেতরের ডেকরেশন ও প্রতিটি কেবিন যাতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করে, সেভাবে গড়ে তোলা হবে। এমনকি ভিআইপি কেবিনের নামকরণ করা হবে নবাবদের নামানুসারে। থাকছে একটি ভিভিআইপি কেবিনও। লঞ্চটিকে এমনভাবে নামানো হবে, একবার কোনও যাত্রী উঠলে পরে কোনও কাজ না থাকলেও লঞ্চটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে উঠতে বাধ্য হবেন।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় সড়কপথে স্বল্প সময়ে ঢাকা-বরিশাল চলাচল করতে পারছে যাত্রীরা। এ কারণে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। সে থেকে উত্তরণে স্বাভাবিক দিনগুলোতে ঢাকা ও বরিশাল থেকে দুটি করে চারটি লঞ্চ ছেড়ে আসছে। একটি লঞ্চের ট্রিপ পেতে পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি দাবি করে বলেন, লঞ্চে ভ্রমণ সবচেয়ে নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী।
তা ছাড়া মালামাল পরিবহনে সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লঞ্চে মালামাল পরিবহন করছেন। লঞ্চ ব্যবসা বরিশালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ কারণে এই নৌযান ব্যবসাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে গেল আট বছরের ব্যবধানে বরিশালের চারটি ডকইয়ার্ডে নির্মিত সুন্দরবন কোম্পানির আটটি, সুরভীর চারটি, কীর্তনখোলার ও অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির দুটি করে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী বহরে যুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পারাবত, শুভরাজ, আওলাদ অব প্রিন্স ও মানামী কোম্পানির একাধিক লঞ্চ। যাত্রী সংকটে এসব লঞ্চের আয়ের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে মালামাল পরিবহন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।