জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের ৪ দিনের মাথায় গঠিত হচ্ছে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সরকারে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ৯টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টারা।
১৬ উপদেষ্টার তালিকায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল। তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের অভিভাবক হিসেবে সব সময় সামনের সারিতে দেখা গেছে ঢাবির এই শিক্ষককে। বিশেষ করে আন্দোলনকরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার করলে অভিভাবকের ভূমিকায় থানা থেকে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হন আসিফ নজরুল। তাছাড়াও বৈষম্যবিরোদী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
এছাড়াও দেশের অনেক শিক্ষার্থীর আদর্শের পাশাপাশি সুশীল সমাজেরও একজন তিনি। ১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন আসিফ নজরুল। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। বেশ কিছু গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি।
আসিফ নজরুল ঢাবির আইন বিভাগ থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক ও ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ১৯৯৯ সালে সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে জার্মানীর বন শহরের ইনভায়রনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে তিনি পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে একজন কমনওয়েলথ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে ১৯৯১ সাল থেকে আসিফ নজরুল একটি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিত্রায় প্রতিবেদক হিসাবে কাজ করতেন। পরে বিচিত্রার উত্তরসূরি সাপ্তাহিক ২০০০-এ প্রদয়ক সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। তিনি কিছু সময় বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে প্রায়ই দেখা যায়।
২০১২ সালে আসিফ নজরুলকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ১২ মার্চ ২০১২ তারিখে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে টক শোতে দেওয়া বক্তব্যে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উসকানি দেওয়া হয়েছে বলে একটি রিট আবেদন করলে আদালত এই আদেশ দেন। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অফিসকক্ষ কেরোসিন তেল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আসিফ নজরুলকে ২০১৩ সালের মে মাসে টেলিফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, সরকারের সমালোচনা করার জন্যই তাকে এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে মাদারীপুর আদালতে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে ৫০০ ও ৫০১ নম্বর ধারায় মানহানির মামলা হয়।
আসিফ নজরুল লিখিত প্রবন্ধ-প্রতিবেদন-গবেষণার তালিকায় রয়েছে, ‘১/১১ সুশাসন বিতর্ক’, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার: জাহানারা ইমামের চিঠি’, ‘আওয়ামী লীগের শাসনকাল’, ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২: গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা’। তার লিখিত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের নাম ‘পিএইচডির গল্প’। আফিস নজরুলের বেশ কিছু উপন্যাসও রয়েছে। সেগুলো হলো, ‘নিষিদ্ধ কয়েকজন’, ‘ক্যাম্পাসের যুবক’, ‘আক্রোশ’, ‘পাপ’, ‘উধাও’, ‘অন্য আলোর দিন’, ‘দখল’, ‘অন্যপক্ষ’, ‘তাদের একটি রাত’, ‘ছোঁয়া’, ‘অসমাপ্তির গল্প’, ‘বেকার দিনের প্রেম’ ও ‘আমি আবু বকর’।
ব্যক্তি জীবনে আসিফ নজরুল প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কন্যা শীলা আহমেদের স্বামী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।