জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতিবছর ১ জুলাই থেকেই কোনো জরিমানা ছাড়া চলতি করবর্ষের নিয়মিত রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। জরিমানা ছাড়া নিয়মিত রিটার্ন জমার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। এ সময়ের পরও আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জরিমানা দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। করদাতা যে কর সার্কেলের আওতায় আছেন, সেখানকার উপ-কর কমিশনারের অনুমতি নিয়ে এ সময়ের পরও রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ আছে।
টানা চতুর্থবারের মতো আয়কর মেলার আয়োজন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে করদাতাদের সুবিধার্থে মেলার আদলেই দেশের সব কর অঞ্চলে নভেম্বরজুড়ে মিনি করমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশব্যাপী ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে করদাতারা চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। সাধারণত প্রতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত—এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৯০ লাখ টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৩০ লাখের মতো লোক নিজেদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত জানিয়ে রিটার্ন জমা দেয়।
রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার কাজটি মূলত আয়কর অফিসে গিয়ে করতে হয়। তবে এখন অনলাইনেও করা যায়।
যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে আয়কর অফিস থেকে নির্দিষ্ট ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দিলেই কাজ শেষ। তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য নির্দিষ্ট ফরমের সঙ্গে বেশ কিছু কাগজপত্রও যুক্ত করতে হয়।
এই কাগজপত্রগুলো মূলত করদাতার আয়ের উৎস ও পরিমাণের প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয়। করদাতাকে রিটার্ন দাখিলের সময় ভিন্ন ভিন্ন খাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হতে পারে। যেমন—
বেতন খাত : করদাতা যদি সরকারি বা বেসরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হন তাহলে তাঁকে যেসব নথিপত্র সংযুক্ত করতে হবে তা হলো বেতন বিবরণী, ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার সপক্ষে প্রমাণাদি।
যেমন—জীবন বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।
নিরাপত্তা জামানতের সুদ খাত : বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয় সে বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি, সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
গৃহ-সম্পত্তি খাত : বাড়িভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রসিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়িভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়িভাড়া জমাসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব বিবরণী, পৌর কর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রসিদের কপি, ব্যাংকঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট ও গৃহ-সম্পত্তি বীমাকৃত হলে বীমা প্রিমিয়ামের রসিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা খাত : ব্যবসা বা অন্যান্য পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
অংশীদারি ফার্মের আয় : অংশীদারি ফার্মের ব্যবসা থাকলে ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র জমা দিতে হবে। অন্যান্য উেসর আয়ের খাত—নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি, ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী কিংবা সার্টিফিকেট ও অন্য যেকোনো আয়ের উেসর জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।
যাদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক
দেশে সব মিলিয়ে ৪৩টি সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে আগের মতো রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। গত বছর পর্যন্ত ৩৮টি সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগত। নতুন আয়কর আইনে পাঁচটি সেবা যোগ করা হয়েছে। সেবাগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণ (বাড়ির মালিক); নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণ (সরবরাহকারী); ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খোলা ও চালু রাখা; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্ত করা বা বহাল রাখা; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গঠিত এমন কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিল।
আগে থেকেই রিটার্ন জমার রসিদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন করলে; পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; গাড়ি থাকলে, ক্রেডিট কার্ড নিলে; সরকার থেকে ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন পেলে; কোনো কম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হলে; কারো সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিলে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।