জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের উত্তর সিকিমে লোনাক হ্রদ ভেঙে সৃষ্ট হরপা বানের জেরে বদলে গেছে তিস্তার গতিপথ। সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অন্তত ৫ জায়গায় গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে প্রমত্তা এ নদীর। এ অবস্থায় ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেরই তিস্তার তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে তিস্তার এমন গতিপথ বদলের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ দপ্তর। এরপরেই সেচ দপ্তর থেকে ‘মরফোলজি সার্ভে’ শুরু করা হয়।
তিস্তার গতিপথ পরিবর্তনের ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের মুখ্য বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘নদী অজস্র জায়গায় কখনও ডান দিকে কখনও বাঁ দিকে সরে এসেছে।’
উপগ্রহের ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে সেচ দপ্তরের শীর্ষ এই আধিকারিক বলেন, ‘সেবক থেকে সমতলে নামার পরেই বাঁ দিক ঘেঁষে টোটোগাঁও ছুঁয়ে বইত তিস্তা। সিকিমে বিপর্যয়ের পরে, নদী সরে গিয়েছে ডান দিকে, লালটং বস্তির দিকে। তারপরে, সমতলের দিকে আরও কিছুটা এগোলেই গজলডোবা ব্যারাজ। সে ব্যারাজের গেট পেরিয়ে মিলনপল্লির কাছে তিস্তা ডান থেকে সরে চলে গিয়েছে বাঁ দিকে এবং অনেকটা দূরে। মালবাজার লাগোয়া এলাকাতেও গতিপথ বদলেছে তিস্তা। ধর্মপুর এবং বাকালিতে আবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে সরেছে। চ্যাংমারিতেও নদী সরে গিয়েছে বাঁ দিকে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দোমোহনী থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত নদী গতিপথ বদলেছে।’
কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, মূলত লোনাক হ্রদ এবং চুংথাম বিপর্যয়ের পর প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি, পাথর তিস্তার অববাহিকায় জড়ো হয়েছে। বিপুল এই পলি-পাথর নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে কোথাও ডান দিকে কোথাও বাঁ দিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। নদীগর্ভের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ভয়ের বিষয় হচ্ছে- এর ফলে বন্যার সম্ভাবনা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পূর্ব চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিস্তার গতিপথ পরিবর্তনের জেরে বাংলাদেশে কতটা প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘তিস্তা অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক নদী, বাংলাদেশে এর গতিপথের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের কাছে এখনও কোনো তথ্য নেই। তবে দুই দেশের ক্ষেত্রেই উত্তরের লাইফ লাইন তিস্তা। এর গতিপথে আচমকা বদল এলে উত্তরের জনজীবন উত্তরের অর্থনীতির উপরে বড়সড় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আমরা গোটা ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে ‘মরফোলজি সার্ভে’ শুরু করেছি। নদীর গতিপথের যে ছবি উপগ্রহে ধরা পড়েছে, তার সঙ্গে নদীর অতীত, বর্তমান ভৌগোলিক গঠন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পরের ধাপ হল তিস্তা নদীতে সরেজমিনে সমীক্ষা। এছাড়াও ‘আরআরআই’ তথা ‘রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এর তরফে আধিকারিকরা নদীর এই গতিপথের বদলে যাওয়া রূপ সরেজমিনে দেখতে আসবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেবে সেচ দপ্তর। তবে গোটা প্রক্রিয়ার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। ইতিমধ্যে শেষ দপ্তরকে বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।