স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে দিন চারেকও হলো না, বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি দুই দল আবার মাঠে নেমে গেছে একে অন্যের বিপক্ষে! পার্থক্য বলতে, বিশ্বকাপটা ছিল ওয়ানডের, আর কাল ভিশাখাপত্তনমে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া খেলেছে টি-টোয়েন্টি। গ্যালারিতে তবু দর্শক হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত এই ভরা গ্যালারির দর্শক বাড়ি ফিরেছে পূর্ণ হৃদয় নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ২০৮ রান করলেও ভারত যে লক্ষ্যটা পেরিয়ে গেছে ২ উইকেট হাতে রেখে।
কিন্তু ভারতের জয়ের মুহূর্তটা একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ভারতের যখন ১ রান দরকার, রিংকু সিং ছক্কা মেরেছিলেন শন অ্যাবটকে। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার নো বলও ডেকেছেন সেই বলে। পরে দেখা গেল, রিংকুর সেই ছক্কাও হিসাবে নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ, ভারতের রান ২১৫/৮ না হয়ে ২০৯/৮-ই হলো। রিংকুর রানও ২৮ না হয়ে ২২-ই থাকল। কিন্তু কেন হলো এমন? এ নিয়ে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই সংশয়ে।
এর ব্যাখ্যা অবশ্য সহজই। ভারতের তখন ১ রান দরকার, রিংকু ছক্কা মারলেও তার আগেই তো শন অ্যাবটের ওভারস্টেপিংয়ের কারণে নো বল হয়ে গেছে। অর্থাৎ, নিয়ম অনুযায়ী ভারত ১ রান পেয়ে গেছে। অর্থাৎ, বল অ্যাবটের হাত থেকে বের হতে না হতেই তো ভারতের জয় নিশ্চিত। এরপর রিংকু ছক্কা মারলেন নাকি আউট হলেন, তাতে তো আর কিছু যায়-আসে না।
এ নিয়ে আইসিসির আইনও আছে। ছেলেদের টি-টোয়েন্টি প্লেয়িং কন্ডিশনের ১৬.৫.১ ধারা অনুযায়ী, ‘আইনের ১৬.১, ১৬.২ বা ১৬.৩.১ ধারা অনুযায়ী ম্যাচ যখনই ফল দেখে ফেলবে, সে সময়েই ম্যাচ শেষ ধরে নেওয়া হবে। এরপর যা-ই ঘটুক না কেন, যদি সে ঘটনাটি ৪১.১৭.২ ধারার (রান জরিমানা) সংক্রান্ত কিছু না হয়, তাহলে কোনো ঘটনাকেই আর ম্যাচের অংশ ধরা হবে না। ‘
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কাল জশ ইংলিসের ৫০ বলে ১১ চার ও ৮ ছক্কায় অসাধারণ সেঞ্চুরি (১১০ রান) ও ওপেনিংয়ে নেমে স্টিভ স্মিথের ৪১ বলে ৫২ রানের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া ২০০-ছাড়ানো স্কোর দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপর জবাব দিতে নেমে ভারত ২২ রানের মধ্যেই হারায় দুই ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের উইকেট। বিশ্বকাপের পরপরই সিরিজ বলে এখানে কোহলি-রোহিত-বুমরা-শামিদের মতো তারকারা নেই, অস্ট্রেলিয়া দলেও যেমন ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলরা নেই। এই ম্যাচে ভারত যখন ২০৯ রানের লক্ষ্যে ২২ রানে ২ উইকেট হারায়, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের হার ধরে নিয়েছিলেন বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমী।
অন্যদের অনুপস্থিতিতে এই সিরিজে অধিনায়কত্ব পাওয়া সূর্যকুমার যাদবই জ্বলে উঠলেন। ইশান কিষাণের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তাঁর জুটিটা স্থায়ী হলো ৭২ বল, তাতে এসেছে ১১২ রান। সেই জুটিই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিষাণ ৩৯ বলে ৫৮ রান করে আউট হয়ে গেলেও সূর্য দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। বেহরেনডর্ফের করা ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে সূর্য যখন আউট হচ্ছেন, তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বলে ৪২ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রান। ভারতের রান ততক্ষণে হয়ে গেছে ১৯৪।
কিন্তু সূর্যকুমার আউট হওয়ার সময়েও ১৪ বলে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ১৫ বলের সমীকরণে থাকা ভারতের জিততে এত কষ্ট হলো কেন? উত্তর – শেষ ওভারে তিন বলে তিন উইকেট, যার দুটি পরপর দুই বলের দুই রানআউট।
শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৭ রান, রিংকু প্রথম বলেই অ্যাবটকে চার মারেন। দ্বিতীয় বলে ব্যাটে-বলে না হলেও লেগ বাইতে ১ রান পেলেন রিংকু। গেলেন নন-স্ট্রাইকে। এরপর তো অন্য পাশে সার্কাস! তৃতীয় বলে অক্ষর প্যাটেল ক্যাচ দিলেন অ্যাবটের হাতেই। তার পরের বলে উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডের হাতে বল রেখেই ভোঁ দৌড় দিলেন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান বিষ্ণয়। ওয়েড নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করে আউট করতে পারলেন না, কিন্তু বোলার অ্যাবট তা ঠিকই করলেন। তবে ভারতের জন্য তখন সুখবর – রিংকু স্ট্রাইকে।
কিন্তু পরের বলে আবার রানআউট! অ্যাবটের বাউন্সারে পুল করে লং অনের বাঁ দিকে পাঠালেন রিংকু, দৌড়ে দুই রান নিতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু দ্বিতীয় রানটা আর হলো না। তবে ভারতের জন্য স্বস্তির ব্যাপার, রানআউটটা হলো নন-স্ট্রাইক প্রান্তে, আর্শদীপ আউট। ভারতের তবু স্বস্তি, স্টাম্প ভাঙার আগে দুই ব্যাটসম্যানই ক্রিজের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ায় রিংকু তখন স্ট্রাইকে। এরপর তো শেষ বলের ওই নাটক!
অ্যাবটের মিডল স্টাম্পের ওপর হিটিং জোনে করা বলে স্বপ্নের মতো শেষই করেছিলেন রিংকু, বলটাকে পাঠিয়েছেন গ্যালারিতে। কিন্তু পরক্ষণেই তৃতীয় আম্পায়ার জানালেন, অ্যাবট তো নো বল করেছেন! রিংকুর ছক্কাটা তাই শুধু অনুশীলন হয়েই থাকল রিংকুর জন্য। মজার ব্যাপার, ভারতের যদি তখন ১ রানের বেশি দরকার থাকত, তাহলে রিংকুর ছক্কাও হিসাবে নেওয়া হতো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।