জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের আইডিয়া ভারতের দেওয়া আইডিয়া। এই আইডিয়া বাস্তবায়ন হবে না অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পঞ্চগড় জেলা শহরের শেরে বাংলা পার্ক এলাকায় পঞ্চগড় জেলা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সারজিস।
সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে একটা কথা বলি, এই বাংলাদেশে যারা ২০০৯-এ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, শাপলায় আমাদের নিরীহ আলেম ভাইদের ওপরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এই ২৪-এর অভ্যুত্থানে হাজারের অধিক ছাত্রজনতাকে হত্যা করেছে, সেই খুনিরা কখনও বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে না।’
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি চোরে চোরে মাস্তাতো ভাই উল্লেখ করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এক চোর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যেই চোর এত দিন তাদের ছায়াতলে ছিল, সেই চোর এখন তাদের ব্যানারে তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা বলছে। চুরি বাটপারি ছাড়া আওয়ামী লীগের কেউ নেতা হয়নি।
সারজিস আলম বলেন, ‘যেভাবে আওয়ামী লীগের সকল দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেভাবেই তাদের বড় দোসর জাতীয় পার্টিরও সকল কর্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের বি-টিম জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের ফ্যাসিস্টদের প্রতি নমনীয় আচরণ আপনাদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থার সংকট তৈরি করছে। আপনাদের কাজ হলো খুনিদের বিচারের মঞ্চে নিয়ে যাওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্চগড়ে ছাত্রদল স্কুলগুলো কমিটি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে অপরাজনীতির চক্রে ঢুকাবে। সেখানে মাদকের ব্যবসা শুরু করবে, চাঁদাবাজি করবে।’
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘যারা জাতীয় পার্টিকে ধরে আওয়ামী লীগারদের নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে, তারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না। তারা দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধাতে চায়। যারা এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় এবং বাংলাদেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এখন বিএনপিকেও প্রমাণ করতে হবে তারা জাতীয় পার্টিকে চায় কি না। বিএনপি যখন গত ১৫ বছর নির্যাতনে ছিল, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল? তখন জাতীয় পার্টি খুন-গুমসহ আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মের বৈধতা দিয়েছে।’
তুষার বলেন, ‘যারা জাতীয় পার্টির ব্যানারে গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে—প্রত্যেকে দুর্নীতিবাজ, প্রত্যেকে অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের প্রতি নমনীয় না থেকে এই সম্পদ ক্রোক করা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা। তাদের তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই নেই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হলেও এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাংলাদেশে নাই।’
বিবৃতি বাদ দিয়ে সরকারকে অ্যাকশন নেওয়ার দাবি জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, বিবৃতি থেকে বের হয়ে আসেন। তারা শুধু বিবৃতি দেয় কোনো অ্যাকশন নেয় না। আপনার কাজ হচ্ছে অ্যাকশন নেওয়া। পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকায় ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সরকার ও তার গোয়েন্দা বাহিনী কী করছে। ঢাকা শহরের হাতিরপুল, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের অপকর্ম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে অনেক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২৩৪ বিলিয়ন ডলার শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে পাচার করেছে। ওই টাকার গরমেই এখন নানা উৎপাত করতেছে। এই টাকা দেশের প্রতিটি গ্রামে ভাগ করে দিলে প্রতিটি গ্রাম ১০০ কোটি করে টাকা পেত।’
তুষার বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই, আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান, তাহলে ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে গ্রেপ্তার করেন। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আপনার শক্ত অবস্থান নিন। ভিপি নুরকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। তা না হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না।’
এ সময় শ্রমিকদের সামনে রেখে অধিকার আদায়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় পঞ্চগড় জেলা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাসহ পঞ্চগড় জেলার এনসিপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।