জুমবাংলা ডেস্ক : জরুরি প্রয়োজনে সপ্তাহখানেক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় যান এম এ জলিল। সকালে গিয়ে বিকেলে ফেরার পথে বাঁধে বিপত্তি। ওপারের আগরতলা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, দিনে গিয়ে দিনে আসা যাবে না। অন্তত একদিন হলেও থাকতে হবে।
আখাউড়ার এম এ জলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাকে বলা হয় ট্যুরিস্ট ভিসা মানেই তো আপনি ঘুরতে এসেছেন। দিনে গিয়ে দিনে আসার জন্য এ ভিসা দেওয়া হয়নি। আপনাকে কমপক্ষে একদিন হলেও থাকতে হবে। এ কথা শোনার পর হাতে তেমন টাকা না থাকায় চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই। হতাশা নিয়ে বের হয়ে আমার এক আত্মীয়কে বন্দরের কাছে পেয়ে স্বস্থি ফিরে পাই। ওইদিন রাতে তাদের বাড়িতে থেকে আমি ফিরে আসি।
সপ্তাহ দু’য়েক আগে একদিন থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হলেও এখন বলা হচ্ছে দুদিন থাকতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশি যাত্রীদেরকে আসতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশিদেরকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার বিষয় নিয়েও যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এতে বাংলাদেশি যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে এ পথ দিয়ে ভারত যেতে উৎসাহ হারাচ্ছেন।
যাতায়ত সুবিধা ও কম খরচের কারণে দিনকে দিন আখাউড়া স্থলবন্দরটি বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য যাতায়াতের তালিকায় পছন্দের প্রথমদিকে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ অন্তত ৮-১০ জেলার বাংলাদেশি এ পথ দিয়ে ভারতে যাতায়ত করেন। ভ্রমণের পাশাপাশি চিকিৎসা ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাজেও যাত্রীরা ওই দেশে যান। তবে যাত্রীদের মধ্যে ভ্রমণ ভিসায় যাতায়তকারির সংখ্যাই বেশি।
নতুন করে ভিসা দেওয়া শুরু হলে হুট করেই এ পথে যাত্রী পারাপার বেড়ে যায়। ঈদের ছুটিতে যাত্রীসংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ হয়। ঈদের তিন দিন আগে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এমনকি ঈদের দিন প্রায় ৫০০ যাত্রী যাতায়ত করেন।
ওই সময়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। বাংলাদেশের প্রান্তে দ্রুত ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ করা হলেও ওপারে বেশ সময় লাগে। একেকজন যাত্রী পার হতে এক থেকে তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কখনো কখনো যাত্রীরা বিমান ধরতে পারেন না দেরি হওয়ার কারণে। ফিঙ্গার প্রিন্ট কী কারণে ওখানে রাখা হয় সে বিষয় নিয়েও অনেক যাত্রী প্রশ্ন তোলেন। এসব কারণে অনেকে এ পথে যাতায়তে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান।
চট্টগ্রাম থেকে আসা মুক্তা বিশ্বাস নামের এক নারী জানান, চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে ছেলেকে নিয়ে ভারতে যাচ্ছি। এ পথ দিয়ে ভারতে গেলে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। বিশেষ করে ট্রেন যোগাযোগ। তাছাড়া এ বন্দর দিয়ে আগরতলা গেলে বিমানেরও ব্যবস্থা আছে। আখাউড়ার স্বপন দেবনাথ নামের আরেক যাত্রী বলেন, এপারের ইমিগ্রেশনের কাজ খুবই দ্রুত শেষ করা যায়। তবে ওপারের ইমিগ্রেশনে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যাত্রী বলেন, গত সপ্তাহে আগরতলায় যাই। যাওয়া-আসার পথে ওইপারে আনুষাঙ্গিক কাজ সারতে ইচ্ছে করেই দেরি করানো হয়। এছাড়া তারা রূঢ় আচরণ করেন। কেউ রাত্রিযাপন না করে এলে তাকে বাংলাদেশে আসতে দিচ্ছেন না। দুদিন থাকার জন্য বলা হয়। একদিন থাকার পর আবার এসে অনুরোধ করলে তখন কাউকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের এক যাত্রী বলেন, ফেরার পথে ওখানকার চেকপোস্টে কাজ সারতে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগে। সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো, ভবনের ভেতরে অনেক লোক অপেক্ষমাণ আছে উল্লেখ করে গেইটের বাইরে রোদে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে ছোট দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ অস্বস্থির মধ্যে পড়তে হয়। আমার মতো আরো অনেককেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশে আসার পর আধা ঘণ্টারও কম সময়ে সব কাজ শেষ করা যায়।
ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত মো. মোস্তফা বলেন, থাকার কোনো নিয়ম তো আগে তারা করেননি। এখন শুনছি তারা একদিন না থাকলে ট্যুরিস্ট ভিসার যাত্রীদেরকে আসতে দিচ্ছেন না। কেন তারা এমন করছে আমরা জানি না। অনেক সময় যাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে ওপারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও লাভ হয় না।
আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের সহকারি ইনচার্জ মো. মোরশেদুল হক বলেন, যতদূর জানি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা নেই। মৌখিকভাবেই এটা করে যাচ্ছেন তারা। এতে বাংলাদেশি যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীদেরকে এক থেকে তিন দিন থাকার কথা বলা হচ্ছে। আবার দু’একজন অনুরোধ করে একদিনেই ফিরে এসেছেন। কেন তারা এমন করছে জানি না। এ বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের ফোন রিসিভ করতে চায় না বলে কিছু জানাও যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতীয় যাত্রীরা যখন ইচ্ছা যাওয়া-আসা করতে পারছেন। এক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে কোনোরকম শর্ত দিচ্ছি না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো ধরনের নির্দেশনাও নেই।
ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ভারতে গেলে রাত্রিযাপন বাধ্যতামূলক হওয়ার কোনো নির্দেশনা সেদেশে আছে বলে জানা নেই। কিন্তু তারা কেন এমন করছে বুঝতে পারছি না। ভারতীয় যাত্রীরা দিনে দিনে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বাধা দিচ্ছি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।