আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গিয়েছে আমদানি ব্যয়। যদিও আমদানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি রফতানি। ফলে মাসভিত্তিক হিসাবে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। গত মাসে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৩৩৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর দ্য প্রিন্ট।
কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে বিশ্বজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী ছিল বিভিন্ন পণ্যের দাম। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর দাম বাড়ার গতি আরো ত্বরান্বিত হয়। জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে অস্থিরতা চলছে। পাশাপাশি দেশ দুটি কয়েকটি শস্যের শীর্ষ সরবরাহকারী হওয়ায় বেড়ে গেছে খাদ্যের দামও।
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসে ৬ হাজার ৬২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ভারত। আমদানির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটির আমদানিতে এমন উল্লম্ফন দেখা দেয়। গত মাসে মোট আমদানিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের অংশ ছিল ৩০ শতাংশ। অর্থের হিসাবে এ আমদানি ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৮১ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ সময়ে স্বর্ণ আমদানি ৭৫৯ শতাংশ বেড়ে ৬৮০ কোটি ডলার, ইলেকট্রনিক পণ্য ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৫৪৪ কোটি ডলার এবং কয়লা আমদানি ২ দশমিক ৬ গুণ বেড়ে ৫৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে এ সময়ে ৩ হাজার ৭২৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে ভারত। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। এর আগে মার্চ ও এপ্রিলে রেকর্ড পরিমাণ রফতানি করেছিল দেশটি। গত মাসের রফতানি আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ কম। মে মাসে মোট রফতানির ৮১ শতাংশই ছিল ১০টি প্রধান পণ্য গ্রুপ। এগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক, তুলা ও কাপড় ছাড়া সব খাতের রফতানিই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। শীর্ষ রফতানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম, রত্ন ও গহনা, জৈব এবং অজৈব রাসায়নিক।
এদিকে মে মাসে সবমিলিয়ে আমদানি ও রফতানির মধ্যকার ব্যবধান আরো বিস্তৃত হয়েছে। গত মাসে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ২৭১ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৩৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মহেশ দেশাই বলেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারত ৯২৯ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বোঝা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও খাতটি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, তবে এ খাতের চলমান গতি মন্থর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে উন্নত অর্থনীতিগুলোয় স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে চাহিদা কমার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আমাদের রফতানিতেও ভাটা পড়তে পারে।
গত এপ্রিলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। সংস্থাটি আগের পূর্বাভাস ৪ দশমিক ৭ শতাংশ সংশোধন করে এটি ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনে কভিডজনিত বিধিনিষেধকে দায়ী করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।