আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে বাঙালি মুসলিমদের ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে—এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে মুসলিম নাগরিকদের দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে এবং ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে টার্গেট করা হচ্ছে নিরীহ মানুষদের। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স ও দ্য টেলিগ্রাফ।
এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে মে মাস থেকে ৩০৩ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে। এর আগে, বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল যাদের ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল—সেই ৩০ হাজার মানুষের মধ্য থেকে এই ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া হয়। অথচ এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আসামে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা এবং ভিটেমাটি সবই রাজ্যেই রয়েছে। আসামে লক্ষাধিক পরিবার রয়েছে যাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ এবং তাদের পরিবারকে ভুলভাবে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হচ্ছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তারা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে এবং আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার দরুন উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও তাদের নেই। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, এই বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় মূলত মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
দ্য টেলিগ্রাফ আসাম সরকারের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।
আসাম রাজ্য, যার বাংলাদেশের সঙ্গে ২৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, গত মাস থেকে রাতের আঁধারে ‘পুশ-ইন’ কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ধরনের পদক্ষেপ রাজ্যে রাজনৈতিকভাবে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় অসমিয়া ভাষাভাষীরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা বাঙালি মুসলিমদের চাকরির বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, যা এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছেন, “বিদেশি বিতাড়নের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের চাপ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৩০৩ জনকে পুশব্যাক করেছি এবং ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। রাজ্যকে রক্ষায় আমাদের আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।”
তবে এই প্রক্রিয়ায় কিছু বিতাড়িত ব্যক্তিকে ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছে ভারত। এমনই একজন ৫১ বছর বয়সী প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম, যাকে ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল এবং পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।
খাইরুল জানান, “২৩ মে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় এবং পরে চোখ ও হাত বেঁধে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৪ জনকে রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়।” বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) তাদের ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ ফেলে রাখে। খাইরুল জানান, তার স্ত্রী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে ফেরত আনা হয়, তবে অন্যদের কী হলো, তিনি জানেন না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের জানান, ভারত থেকে কিছু মানুষ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, এই ধরনের পুশব্যাক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। তাদের আশঙ্কা, প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরও ভুয়া নথির মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।