জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনী নদীতে গভীর কূপ খনন করে সমঝোতার এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নিতে চায় ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। সোমবার (১২ জুন) দুই দেশের এ সংক্রান্ত যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি খনন স্থান নির্ধারণে পরিদর্শন করেন।
যৌথ পরিদর্শনে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কমিটির নেতৃত্ব দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের দক্ষিণ-র্পূবাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর। ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, ত্রিপুরার পিডব্লিওডি(ডব্লিও আর) চিফ ইঞ্জিনিয়ার শ্যাম লাল ভৌমিক।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রামগড় সীমান্তের মৈত্রী সেতু দিয়ে ওপারে যান। সেতুর শূন্য রেখায় ভারতীয় কমকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। যৌথ কমিটির সদস্যরা কূপ খননের জন্য স্থান নির্ধারণ করতে মৈত্রী সেতু সংলগ্ন ফেনী নদীর ২-৩টি স্পট সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে তারা বৈঠকে বসেন। ‘নদীতে কূপ খনন’ এবং ‘নদীর পাড়ে কূপ খনন’ এ নিয়ে দুপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে বৈঠকে গভীর কূপ খননের স্থান নির্ধারণ হয়নি।
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে দুই দেশের টেকনিক্যাল কমিটি কূপ খনন স্থান নির্ধারণ ও পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে যৌথ পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময় মৈত্রী সেতু সংলগ্ন নদী থেকে কয়েক মিটার দূরে ভারতীয় অংশে কূপ খনন এবং নালার মাধ্যমে নদী থেকে পানি নিয়ে তা পাম্পের সাহায্যে ভারতকে তুলে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারত বরাবরই তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীতে এ কূপ খনন করতে চাচ্ছে।
যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে যৌথ নদী কমিশনের ৩৭ তম বৈঠকে সাবরুম শহরের মানুষের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১২ সালে কারিগরি কমিটির বৈঠকে ৭টি শর্তসাপেক্ষে খাবার পানি সরবরাহের জন্য ‘লো লিফ্ট’ পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৯ সালের অগাস্টে ঢাকায় সচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর ঐ বছর ৫ অক্টোবর ভারতে দুদেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলবে ভারত। যার পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ৫২ লিটার এবং দিনে প্রায় ৪৫ লাখ লিটার। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, মানবিক কারণে সাবরুমের পানি সংকট মেটাতে বাংলাদেশ এ পানি দিতে সম্মত হয়।
ভারতকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সম্মতি দেওয়া হয়েছে সাতটি শর্তে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, ‘লঞ্চিং অ্যাপ্রোচ‘ এর প্রশস্ততা ৭.৬৫ মিটারের পরিবর্তে ৪.৫ মিটার হবে। পাম্পের বৈশিষ্ট চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশে সরবরাহ করতে হবে। ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১ দশমিক ৮২ কিউসেকের বেশি হবে না, যা উভয় দেশের প্রকৌশলীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। বাস্তবায়নের পর উভয় দেশের প্রকৌশলীদের দ্বারা পাম্পের সক্ষমতা যাচাই করা হবে। ত্রিপুরার সাবরুম শহরে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি সরবরাহ পাইপ একটির বেশি হবে না। কূপের অবস্থান যৌথভাবে উভয় দেশের প্রধান প্রকৌশলীগণ নির্ধারণ করবেন। কূপ খননের বিপরীতে ফেনী নদীর বাংলাদেশের দিকে ভাঙন দেখা দিলে ভারতীয় পক্ষ সে অংশের নদীতীর সংরক্ষণে করবে।
যৌথ কমিটির বাংলাদেশের এক সদস্য বলেন, ভারত ফেনী নদীতে গভীর কূপ খনন করে পাইপের মাধ্যমে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নিতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ এতে রাজি নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতীয় অংশে নদীর তীরে এ কূপ খনন করে পানি নিতে। এভাবে পানি তুলে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। এ অবস্থায় দুপক্ষের প্রস্তাবনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।